প্রভাত রিপোর্ট:শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ হালনাগাদ করে নতুন শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ জারি করেছে। ২৪ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন বিধিমালা কার্যকর হয়। আগের বিধিমালার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এবং স্পষ্ট নির্দেশনার ঘাটতি দূর করতেই এ হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পূর্বের বিধিমালায় কেবল ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা থাকায় জনবল সংকটে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়নি। এ সীমাবদ্ধতা দূর করতে নতুন বিধিমালায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পদমর্যাদা ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিধি ৬-এর উপ-বিধি (২), (৩) ও (৪)-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ তাদের সামনে সংঘটিত হলে ঘটনাস্থলেই জরিমানা করা যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, শব্দদূষণের প্রধান উৎস হর্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে পূর্বের বিধিতে আমদানি, উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রির ওপর শাস্তির বিধান না থাকায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। নতুন বিধিমালায় এসব কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা যুক্ত হওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত হর্ন ব্যবহারের লাগাম টানা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন বিধিমালায় শব্দদূষণ রোধে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান এসেছে—লিখিত অনুমতি ছাড়া জনপরিসরে লাউডস্পিকার, মাইক, অ্যাম্প্লিফায়ার ও সুরযন্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে; প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলে বনভোজন বন্ধ; সামাজিক অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল এবং রাত ৯টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার বাধ্যবাধকতা; নীরব এলাকায় আতশবাজি, পটকা, হর্নসহ যেকোনো শব্দসৃষ্টিকারী পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ; এবং রাতের বেলায় সব ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিল্পকারখানা ও জেনারেটরের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন অপরাধের দণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পূর্বের আইনি কাঠামোর ঘাটতি পূরণ করবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
বিধিমালা হালনাগাদের আগে অংশীজনদের নিয়ে একাধিক সভা ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হয় এবং জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়। বিভিন্ন দেশের বেস্ট প্র্যাকটিস পর্যালোচনা করে ২০০৬ সালের বিধিমালার দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয় এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলো নতুন বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২৫ সালের এই বিধিমালা হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।