প্রভাত অর্থনীতি: কেউ এসেছেন পানির নিচে কর্মক্ষম রোবট নিয়ে, কেউ এসেছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে; কেউ আবার এসেছেন লবণাক্ত জলাধারে ফসল চাষের প্রযুক্তি নিয়ে।
এ ধরনের নানা উদ্ভাবনী ও নতুন উদ্যোগ নিয়ে সারা দেশের প্রায় দেড় হাজার তরুণ-তরুণী সোমবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা সবাই এসেছেন বিনিয়োগ সম্মেলনে। আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
চার দিনের এ বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘স্টার্টআপ কানেক্ট’ পর্ব। এটি মূলত স্টার্টআপ খাতের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে নেটওয়ার্কিং এবং সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা।
বিনিয়োগ সম্মেলনে চারটি হলে বিভিন্ন বিষয়ে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু উদ্যোক্তা মূল ভেন্যুর বাইরে তাঁদের পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী করছেন। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান ডুবটেক। প্রতিষ্ঠানটি আন্ডার ওয়াটার বা পানির নিচের রোবট প্রযুক্তি সেবা দেয়। যেমন বন্দরে কোনো জাহাজ এলে সেটির ইন্সপেকশন বা পরিদর্শন করে তাদের তৈরি বিশেষ রোবট। আবার আরেক ধরনের রোবট আছে তাদের, যেটি অ্যাকুয়াকালচার বা পানির নিচে মাছসহ বিভিন্ন জলজ চাষের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা সৌমিক হাসান জানান, তাঁরা দেশে বাণিজ্যিকভাবে এক বছর ধরে কাজ করছেন। এ সম্মেলনে পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তাঁরা।
ইকোসেন্টিল নামের আরেকটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তাদের আইডিয়া বা চিন্তা তুলে ধরে সম্মেলনের একটি অধিবেশনে। তারা জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তীব্র লবণাক্ততার কারণে জলাধারে মাছ বা অন্য ফসল চাষ করা লাভজনক হয় না। সে জন্য তারা পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি হেলোফাইডস (হেলেঞ্চা ধরনের) গাছ রোপণের মাধ্যমে জলাধারের লবণাক্ততা কমিয়ে চাষোপযোগী করার পদ্ধতি ব্যবহার করছে। এখন তারা এই উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে চায়।
এ ধরনের নানা উদ্ভাবনী চিন্তা নিয়েই পুরো আয়োজন ছিল লোকে লোকারণ্য। দিনব্যাপী স্টার্টআপ কানেক্ট অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি তরুণ ও উদ্ভাবনী উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম দিনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন আয়োজকেরা। সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, স্টার্টআপ কানেক্টে শুধু ঢাকা থেকে নয়, সারা দেশ থেকেই তরুণ উদ্যোক্তারা এসেছেন। বিষয়টি খুবই আশাব্যঞ্জক। সারা দেশ থেকে মোট দেড় হাজারের বেশি উদ্যোক্তা এসেছেন। পাশাপাশি ২৫টির বেশি বৈশ্বিক ও স্থানীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
দেশে বিনিয়োগপ্রবাহের বাধা দূর করতে কাজ করছেন বলে জানান আশিক চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশে সমন্বিতভাবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূর করা হবে। দেশের স্টার্টআপ খাত অনেক দিন ধরে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আশিক চৌধুরী বলেন, স্টার্টআপ খাতের মানুষের বড় দাবি ছিল শেয়ার সোয়াপিং। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধা সরিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ স্থানীয় স্টার্টআপ দেশের বাইরের কোনো স্টার্টাআপের সঙ্গে শেয়ার বদল (সোয়াপিং) করতে পারবে।