• রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন

রিয়ালকে বিদায় করে সেমিফাইনালে আর্সেনাল

প্রভাত রিপোর্ট / ৮ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত স্পোর্টস : বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখা রিয়াল মাদ্রিদের অভ্যাস। নতুন রূপকথার জন্ম দিতে রিয়াল বেশির ভাগ সময়ই মঞ্চ হিসেবে বেছে নেয় নিজেদের ডেরা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে। সেই বার্নাব্যুতে এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুসদের কাছ থেকে গতকাল আরেকবার জাদুকরি কিছু দেখার অপেক্ষায় ছিলেন রিয়ালের সমর্থকেরা। কিন্তু প্রতিবারই কি অবিশ্বাস্য কিছু করে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব? নিশ্চয় নয়। এই বাস্তবতাই রিয়ালকে গতকাল মেনে নিতে হলো। মিকেল আরতেতার আর্সেনাল প্রথম লেগে ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর গতকাল বার্নাব্যুর ভয়কেও জয় করে ফেলল। ফিরতি লেগে আর্সেনাল জিতেছে ২-১ গোলে। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল লন্ডনের ক্লাবটি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়ালকে থমকে যেতে হলো শেষ আটেই। রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে। অন্যদিকে আর্সেনাল সেমিফাইনালে উঠল ১৬ বছর পর। গানাররা সেমিফাইনালে খেলবে ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজির বিপক্ষে।
ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখতে হলে রিয়ালকে শুরু থেকেই গোলের সন্ধান করতে হতো। ভিনিসিয়ুস–বেলিংহামরা সেটাই করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়েছে আর্সেনালের জমাট রক্ষণ। পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালও রিয়াল ডিফেন্ডারদের তটস্থ রেখেছিল।
ফরাসি রেফারি ফ্রাঁসোয়া লেতেক্সিয়ের দুবার পেনাল্টির বাঁশি, একবার পেনাল্টি মিস, একবার পেনাল্টি বাতিল, হলুদ কার্ড প্রদর্শন, অফসাইডের ফাঁদে আটকা, ভিএআর যাচাই করতে গিয়ে কালক্ষেপণ—প্রথমার্ধে মোটামুটি সবই হয়েছে, হয়নি শুধু গোল!
বাঁচা-মরার ম্যাচের শুরুতেই ভিনির ক্রস থেকে আর্সেনালের জালে বল পাঠান এমবাপ্পে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালের বুকায়ো সাকার বিদ্যুৎগতির শট রিয়ালের বারের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর রিয়ালের রাউল আসেনসিও নিজেদের বক্সে মিকেল মেরিনোকে ফেলে দেন। ভিএআরের হস্তক্ষেপে পেনাল্টি পায় আর্সেনাল। কিন্তু স্পট কিক থেকে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি সাকা। তাঁর নেওয়া পানেনকা শট ঠেকিয়ে রিয়ালকে জাগিয়ে তোলেন গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া।
প্রথমার্ধের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনার উৎপত্তি ২৩ মিনিটে। দুই দলের আগের লড়াইয়ের নায়ক ডেকলান রাইস নিজেদের বক্সে এমবাপ্পের জার্সি টেনে ধরলে সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি লেতেক্সিয়ে। রাইসকে হলুদ কার্ডও দেখান। এ নিয়ে আর্সেনাল খেলোয়াড়েরা প্রতিবাদ জানালে ভিএআর যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
সত্যিই এমবাপ্পে ফাউলের শিকার হয়েছেন কি না, সেটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে রদ্রিগো অফসাইডে ছিলেন কি না, সেটিও যাচাই করে ভিএআর। প্রায় সাত মিনিট অপেক্ষার পর অবশেষে মাঠের পাশের মনিটরে ভিডিও দেখে রেফারি জানিয়ে দেন অফসাইডও হয়নি, পেনাল্টি দেওয়ার মতো ফাউলও হয়নি। পেনাল্টি বাতিল করে রাইসকে দেখানো হলুদ কার্ডও বাতিল করেন রেফারি। প্রথম লেগে তিন গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়াল এ দিন প্রথমার্ধে একটি শটও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। ফলে কার্লো আনচেলত্তির দলের ওপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোল করার চাপ আরও জেঁকে বসে। গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠা আনচেলত্তি ৬১ মিনিটে তিন বদলি নামান।
কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। ৬৫ মিনিটে উল্টো গোল করে বসে আর্সেনাল। দুর্দান্ত ফুটবলশৈলীর প্রদর্শনীতে বুকায়ো সাকা এবার কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে যেন প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিসের প্রায়শ্চিত্ত করেন। দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল তখন ৪–০ গোলে পিছিয়ে। তবে ২ মিনিটের মধ্যে গোল শোধ দিয়ে নিভু নিভু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন ভিনিসিয়ুস। আর্সেনালের এই গোল খাওয়ার দায়টা অবশ্য উইলিয়াম সালিবার। ডান পাশের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা সালিবাকে পাস দিয়েছিলেন গোলকিপার দাভিদ রায়া। কিন্তু সালিবা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেননি। সুযোগসন্ধানী ভিনিসিয়ুস তাঁর কাছে ছোঁ মেরে বল কেড়ে নিয়ে আর্সেনালের জালে পাঠান। এক গোল শোধ দিলেও রিয়ালের সময় ফুরিয়ে আসছিল। বাধ্য হয়ে প্রায় সবাইকে ওপরে উঠে খেলতে হচ্ছিল। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মার্তিনেল্লি সেই সুযোগটাই কাজে লাগান। কোর্তোয়াকে একা পেয়ে রিয়ালের জাল কাঁপাতে ভুল করেননি আর্সেনালের এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। তাঁর গোলটা যেন রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক হয়ে রইল!


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও