• রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন

ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুমোদন

প্রভাত রিপোর্ট / ৭ বার
আপডেট : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে এবং প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের মানে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা। এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যেকোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। শুধু তা–ই নয়, ওই ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারধারক বা নতুন শেয়ারধারকদের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি বাড়াতে এবং প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে।
এসব বিষয় যুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। কিছুদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে অধ্যাদেশটি জারি হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
খসড়া অনুমোদনের তথ্য জানিয়ে ১৭ এপ্রিল এ বিষয়ে ব্রিফ করেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, একটি শিল্পগোষ্ঠী কয়েকটি ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অনেক টাকা দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ আর না হয়, সে জন্যই ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক ও করপোরেট খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি বাড়বে, আমানতকারীদের স্বার্থও সংরক্ষণ করা যাবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক আর কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে এবং আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না বা না দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন সেটিকে ভালো করার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
বর্তমানে দুর্বল কোনো ব্যাংকের পরিচালনা বা অবসায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। অধ্যাদেশটি পাস হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আলাদা বিভাগ গঠনের কথাও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। পরে সেগুলোকে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বোচ্চ দুই কার্যদিবসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। আর আংশিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমও স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে তিন মাসের জন্য।
এ নিয়ে ব্যাংকের মালিকপক্ষের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে জানান, তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে এ অধ্যাদেশের বিষয়ে বিএবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে ৬ সদস্যের একটি আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথাও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। এ কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে। কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অধ্যাদেশের প্রথম খসড়ায় কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন ডেপুটি গভর্নরকে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদিত অধ্যাদেশে একজন ডেপুটি গভর্নর কমিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটির অবসায়নে আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না।
ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
যেসব ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয় এবং ব্যাংকের ক্ষতি হয়, তাঁরা এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশের আওতায় জারি হওয়া বিধিবিধান অমান্যকারীদের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। প্রাথমিক খসড়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে যুক্ত করা হয়েছে প্রতিদিনের দেরির জন্য ৫ হাজার টাকা করে বাড়তি জরিমানা।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এ অধ্যাদেশ পাসের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি পাস হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আস্থা আরও মজবুত হবে। আমরা মনে করি, আগে এটি চালু হোক। পরে চাইলে সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন ৮ এপ্রিল ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে। বিভাগটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটি করার যৌক্তিকতা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই থাকে তাহলে লাভ কী হবে। কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বাধীন কোনো কাউন্সিল গঠন করাই ভালো হবে। উপদেষ্টা পরিষদ অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও