• মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বেইলী রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টারে আগুন কাল এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে মোটরসাইকেল ও সিএনজি ‘আওয়ামী লীগ আমলে লাইসেন্স পাওয়া গণমাধ্যমের বিষয়ে তদন্ত হবে : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা ২০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা এবার আর দিনের ভোট রাতে হওয়ার কোনো সুযোগ নেই: সিইসি নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ইইউ কাউকে চাপ দেবে না লিগ্যাল চ্যানেলে শ্রমিক নিতে আগ্রহী ইতালি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা: প্রধান উপদেষ্টা পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মুলক মামলার প্রতিবাদে নাজিরপুরে মানববন্ধন বাগেরহাটে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে প্রস্তুতি সভা
বিনামূল্যে প্রাথমিক সেবার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা: প্রধান উপদেষ্টা

প্রভাত রিপোর্ট / ৪ বার
আপডেট : সোমবার, ৫ মে, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন থেকে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসনে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসব সুপারিশের যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। সোমবার (৫ মে) স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়া পর তিনি এই নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদনকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সমস্যাগুলো বহুদিনের সমস্যা। এর মাধ্যমে আমরা যদি এসব সমস্যার সমাধান করতে পারি তা হবে যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এখনই মনোযোগী হতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ডাক্তারের সংকট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার থাকলেও যেখানে দরকার সেখানে ডাক্তার নেই। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা ছাড়া সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়। চিকিৎসকদের যেখানে পোস্টিং সেখানে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে। কমিশন প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যরা তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিকট হস্তান্তর করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক লিয়াকত আলী, ডা. সায়েবা আক্তার; সাবেক সচিব এম এম রেজা, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি উমায়ের আফিফ। স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনের অন্য দুই সদস্য হলেন- ডা. নায়লা জামান খান, ডা. মোজাহেরুল হক।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের ৩২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের পাবলিক ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৮ হাজারের বেশি নিরীক্ষা আপত্তি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে অনেকগুলো ১৯৯৮-২০০৩ সালের প্রথম সেক্টর প্রোগ্রামের সময়কার। এই আপত্তিগুলোর আর্থিক মূল্য রাজস্ব বাজেটে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন বাজেটে ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এর প্রায় ৯৫ শতাংশ আপত্তি রাজস্ব বাজেট সম্পর্কিত, যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন। এই পরিস্থিতি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহির ঘাটতির একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে বলে মনে করে কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা থাকলেও বাস্তবে বহু অনিয়ম বিদ্যমান। সরকারি নিরীক্ষা ব্যবস্থা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও নিরীক্ষা ইউনিট এবং ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যান থাকা সত্ত্বেও বহু নিরীক্ষা আপত্তি অমীমাংসিত থেকে গেছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিটের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেক্টরওয়াইড প্রোগ্রামের শুরু থেকেই অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের চাপের ফলে, ইউনিটটির কাঠামো আনুষ্ঠানিকভাবে গঠনের দিকে কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং জনবলও বৃদ্ধি পেয়েছে। চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের (২০২৪) শেষ নাগাদ, আগের যেসব অভ্যন্তরীণ অডিট আউটসোর্স করা হতো, সেগুলো এখন অর্থ ব্যবস্থাপনা ও অডিট ইউনিট নিজেই সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আর্থিক ও হিসাব সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অডিট আপত্তি রয়ে গেছে। বিভাগীয় সচিব, যিনি প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনিই সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য চূড়ান্তভাবে দায়ী। কিন্তু অডিট আপত্তিগুলোর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি না হওয়ায় এই দায়িত্ব আরও জটিল ও চাপপূর্ণ হয়ে উঠছে। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তিতে এই ব্যর্থতা অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও নির্দেশ করে। এটা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটি বড় ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিডিউশিয়ারি ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর প্রোগ্রামের (২০১৭-২০২৪) সময়ে ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথভাবে নিয়মিত পর্যালোচনার মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। তবে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫৪৪টি অমীমাংসিত অডিট আপত্তি থেকে যায়, যার আর্থিক মূল্য ৩ লাখ ১ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা। এমনকি বিশ্বব্যাংক, আইডিএ, এডিবি, জাইকার মতো প্রধান উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন করা প্রকল্পগুলোতেও অডিট সম্মতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায়নি। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, এফএপি কিছু প্রচেষ্টা করলেও আর্থিক জবাবদিহি ও অডিট আপত্তির নিষ্পত্তি সংক্রান্ত মূল সমস্যাগুলো যথাযথভাবে সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়া, একটি ফলাফলভিত্তিক ও কার্যকর কৌশলগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক তদারকি ব্যবস্থা দুর্বলতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক তদারকি ব্যবস্থাগুলো বর্তমান আর্থিক অনিয়ম ও অডিট আপত্তিগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারছে না। যদিও সরকারি অডিট এবং ফিডিউশিয়ারি অ্যাকশন প্ল্যানের মতো ব্যবস্থা চালু আছে, তবুও বহু সমস্যার অমীমাংসিত রয়ে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, সুষ্ঠু আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, রোগী সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ ও ধারাবাহিকতা, জবাবদিহি এবং জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পুরাতন আইন পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করতে হবে। এছাড়া নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। প্রস্তাবিত নতুন আইনগুলোর মধ্যে আছে– বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন; বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন; প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন; ঔষধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন; অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন; বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল আইন; স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন; হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এক্রেডিটেশন আইন; বাংলাদেশ সেফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিক্যাল ডিভাইস আইন। এছাড়াও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, মেডিক্যাল শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল আইন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, পৌর ও সিটি কপোরেশন আইন ইত্যাদি আইনেরও সংশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করে এই কমিশন।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও