• মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ১২:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ইরান থেকে আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, সাইরেন বাজছে: ইসরায়েল বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের সুযোগ তৈরি করে আইন সংশোধনে ফলকার টুর্কের উদ্বেগ তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ইরানের এক তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংসের দাবি ইসরায়েলের গুম সনদে স্বাক্ষর করলেও এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ আছে: জাতিসংঘ নগরভবনে সভা করেছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে মাননীয় মেয়র বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ এখনো অর্থনৈতিক চাপ সামলে উঠতে পারেনি কিছু ব্যাংক ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়: ভন ডার লিয়েন

পিডিবি লোকসানি প্রতিষ্ঠান : ঋণকে ভর্তুকি হিসেবে রূপান্তর করতে অর্থ সচিবকে চিঠি

প্রভাত রিপোর্ট / ৫ বার
আপডেট : সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: পিডিবি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই ঋণ পরিশোধ করা সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে সুদাসলসহ পুরো ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তর করার অনুরোধ জানিয়ে গত ১ জুন অর্থ সচিবকে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও আইপিপি থেকে কেনা বিদ্যুৎ কম দামে গ্রাহকদের মাঝে বিক্রির পর লোকসান বা ঘাটতির অর্থ ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করা শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। কিন্তু লোকসান বা ঘাটতি মেটাতে আগের দেয়া ঋণ পিডিবির কাছ থেকে ফেরত পায়নি অর্থ বিভাগ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে খাতটির ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা।
বেসরকারিখাতের রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র (আইপিপি) থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকার থেকে নেয়া সুদাসলসহ ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তর করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্যে মূল ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং ৩ শতাংশ সুদহারে মোট সুদ বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের তথ্য আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ থাকার কারণে বিভিন্ন দাতা সংস্থাসহ বিদেশি স্টেকহোল্ডারদের কাছে পিডিবির গ্রহণযোগ্যতা কমছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উচ্চ মূল্যের বিদ্যুৎ কেনার পর পিডিবি তা লোকসানে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে।
২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই লোকসান বা ঘাটতি অর্থ ভর্তুকি হিসেবে না দিয়ে বাজেটা সহায়তা হিসেবে ৩ শতাংশ সুদসহ পিডিবিকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এসব ঋণ নেয়ার পর কোনো অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি পিডিবি। গত বছরের জুন শেষে এই ঋণের সুদাসলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কম দেখাতে এই অর্থকে বাজেট সহায়তার আওতায় পিডিবিকে দেওয়া ঋণ হিসেবে দেখিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সোলায়মান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণের অর্থ কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট সময় পর ওই প্রকল্প থেকে সৃষ্ট সম্পদের ‘ক্যাশ ফ্লো’ থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যায়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য এই ঋণ দেয়নি। বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মোট ঘাটতির সমপরিমাণ টাকা সমন্বয়ের জন্য ঋণ দেওয়া হয়েছে। ‘বিদ্যমান বাস্তবতায় পিডিবি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান এবং এর এমন কোন রাজস্ব আয় নেই, যা দিয়ে এই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিভিন্ন দাতা সংস্থাসহ সব স্টেকহোল্ডারদের কাছে পিডিবির আর্থিক বিবরণী ও ডেট-টু-ইক্যুইটি রেশিও অধিকতর গ্রহণযোগ্য করতে এই ঋণের তথ্য পিডিবির আর্থিক বিবরণী থেকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়। চিঠি পাওয়ার পরদিন বাজেট ঘোষণা করা এবং তার পরপরই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় এ বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পিডিবিকে দেওয়া ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ‘তাই অর্থ মন্ত্রণালয় চাইলেই এই ঋণকে ভর্তুকি হিসেবে রূপান্তর করতে পারবে। এতে অর্থ মন্ত্রণালয় বা পিডিবি কারও কোনো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হবে না। তাই বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করতে পারে অর্থ বিভাগ।’
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাতীয় সংসদে জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ১ লাখা ৪ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ ও রেন্টাল পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলার জন্য ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন শুরু করে সরকার। পরে ২০০৯ সালে বিশেষ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন এবং ক্যাপাসিটি চার্জ ও বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে।
বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কমানোর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে এসব কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি নবায়ন করা শুরুর পর অন্তর্বর্তী সরকারও একই পদ্ধতি অনুসরণ করছে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি বা লোকসান কমানোর জন্য নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সংশোধন করে বিদ্যুতের ট্যারিফ কমানোর উদ্যোগও রয়েছে সরকারের।
এ প্রসঙ্গে আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ, যা অনেক বেশি। এটি ক্রমান্বয়ে কমানোর জন্য সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর মাধ্যমে ভর্তুকির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পিডিবির লোকসান মেটাতে ঋণ হিসেবে দেওয়ার মাধ্যমে ওই সময় বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি কম দেখানো হয়েছে। এখন ঋণের সুদাসলকে ভর্তুকিতে রূপান্তর করা হলে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় বা সরকার পিডিবির মতো অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে। এমনকি পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল প্রকল্পেও অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করেছে।
‘এখন পিডিবিকে দেওয়া ঋণ ভর্তুকিতে রূপান্তর করলে এটাকে রেফারেন্স কেস হিসেবে গ্রহণ করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও আর ঋণের টাকা ফেরত দেবে না। এতে সরকারের অনেক সমস্যা হবে। তাই পিডিবিকে এই সুবিধা দেওয়া যৌক্তিক হবে না।’ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পিডিবির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ধারণারও বিরোধিতা করেন মাহবুব আহমেদ। ‘বিপিডিবি একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান এবং তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে মানুষের ধারণা আছে। তাই ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তর করে বা মওকুফ করে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করা বৃথা। বিপিডিবি যখন পারবে, ঋণ ফেরত দেবে। যদি ফেরত দিতে না পারে, তবুও ব্যালেন্স শিটে ঋণ হিসেবেই রাখতে ।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও