প্রভাত রিপোর্ট : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব, অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থান, শাহবাগে অবস্থান, আন্দোলনকারীদের টাকাসহ গ্রেপ্তার ছাড়াও অনেক গুজব। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপারেও নানা ধরনের স্টেটমেন্ট দেখা যায়। এছাড়া দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে মন্ত্রী-এমপি, আমলা ও আলোচিত ব্যবসায়ীদের দেশত্যাগের হিড়িক পড়েছে বলে খবর রটেছে। তবে এগুলোর মধ্যে সবগুলো খবরের সত্যতা মেলেনি।
শনিবার মধ্যরাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের ফেসবুকে এক পোস্টে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী তার পরিবারের সকল সদস্যসহ আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। বিমানবন্দরের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে পোস্টে বলা হয়, রবিবার (৪ আগস্ট) রাত ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিমানে করে তার পরিবার নিয়ে আমেরিকা উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের এই দাবি ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিক্সন চৌধুরীর দেশ ছাড়ার খবরটি একটি গুজব। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। নিক্সন চৌধুরী ও তার ভাই লিটন চৌধুরী দেশেই রয়েছেন।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দেশ ছেড়েছেন বলেও গুজব ছড়ায়। গণপূর্তমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সজিবুল হুদা জানান, মন্ত্রী মহোদয় ঢাকাতেই আছেন, তিনি এখনও অফিস করছেন।
এদিকে, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে শনিবার সন্ধ্যার পরপর শাহবাগ এলাকায় অবস্থান করে মিছিল ও স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা রাত ৯টার দিকে শাহবাগ ত্যাগ করে। তবে রাতভর গুজব চলে, ‘শিক্ষার্থীরা শাহবাগ ও টিএসসিতে অবস্থান করছেন। সরকারের পদত্যাগের পর তারা ঘরে ফিরবে’। এমন পোস্ট দেখার পর রাত ৩টার দিকে শাহবাগ ও টিএসসিতে গিয়ে কোনো জমায়েত দেখা যায়নি।
রাতে বেশ কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপ ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক আইডিতে কয়েকটি এক হাজার টাকার বান্ডিলের ছবি পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা সারজিসের বাসা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব-১০। তবে যাচাই করে দেখা যায়, যে ছবিটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে সেটি কয়েকদিন আগে এক তরুণী একটি গ্রুপে পোস্ট দেন। পোস্টে লেখা ছিল, আব্বুর পেনশনের টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিলাম। এছাড়াও এমন কোনো অভিযানের কথা নিশ্চিত করেনি র্যাব।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাতভর দেশের পরিচিত ইউটিউবার, ইনফ্লুয়েন্সার ও অভিনেতাদের নামে ছবিসহ ভুয়া পোস্ট করা হয়। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, ভারতীয় অভিনেতা শাহরুখ খান, অভিনেত্রী কাজলের ছবি দিয়ে পোস্ট করা হয়, কোটা আন্দোলনের পাশে ছিলাম, এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পাশে নাই।
টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক ও ইউটিউবার রাফসান দ্যা ছোট ভাই -এর ছবি দিয়েও একই কথা পোস্ট করা হয়। তবে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে গিয়ে এ ধরনের কোনো পোস্ট দেখা যায়নি।
রাতেই ঢাকা ছেড়েছেন কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা এমন একটি গুজবও ছড়ানো হয়। বেশ কয়েকটি গ্রুপে পোস্ট দেওয়া হয়, রাতের মধ্যে দেশ ছাড়ছেন কোটা আন্দোলনকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তাদের দেশ ছাড়তে দেবেন না। ১ দফার হিসাব বাকি আছে। তবে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি ভুয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেটি ভুয়া ও গুজব বলে জানিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শনিবার রাতভর বিভিন্ন গুজবের কোনো সত্যতা পাননি বলে জানান ফ্যাক্ট চেকাররা।
প্রসঙ্গত, ‘এক দফা’ দাবি আদায়ে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।