প্রভাত বাণিজ্য : নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি'র ৯৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক পাঁচ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মালিকানা ও তাদের নাগরিকত্ব, কোম্পানিগুলোর গঠনকালীন মালিকানা কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৮ আগস্ট পররাষ্ট্র সচিবকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের বিদেশি পাঁচ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, ঠিকানা ও অবস্থান, ব্যবসায়িক কার্যক্রম, গত তিন বছরের কর পরবর্তী নিট মুনাফা ও নিট সম্পদ এবং হোল্ডিং কোম্পানির ক্ষেত্রে সাবসিডিয়ারি (সহযোগী) কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কেও তথ্য চেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব কোম্পানির তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে কিংবা কোনো অসঙ্গতি বা ভুল পাওয়া গেলে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি'র লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিতে পাঁচটি বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।'
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের এই পাঁচ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লু হেভেন ভেঞ্চার্স এলএলসি, ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, জেন ফিনটেক এলএলসি, ট্রুপায় টেকনোলজিস এলএলসি এবং সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক ফিনক্লুশন ভেঞ্চার্স।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার আগে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি যাচাই করা হয়, আবার কখনও পরেও করা হয়। লাইসেন্স দেয়ার সময় একটি শর্ত থাকে যে, কোনো তথ্য মিথ্যা বা ভুল প্রমাণিত হলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। অতীতে পিপলস ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার পর তথ্য যাচাই করে মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ওই ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও ভুল তথ্য পাওয়া গেলে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির লাইসেন্স হস্তান্তর করে। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের তখনকার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের অফিসে নগদ লিমিটেডের সিইও তানভীর এ মিশুকের কাছে লাইসেন্স হস্তান্তর করেন বিআরপিডি'র পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো একক ব্যক্তি, পরিবার বা কোম্পানি একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংক কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক হতে পারে না। নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে আইনের এই ধারা থেকে বিশেষ ক্ষমতায় অব্যাহতি দেয় সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসির পাঁচ বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোম্পানিগুলোর সবই ২০২২ বা তার পরে নিবন্ধিত। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ব্লু হেভেন ভেঞ্চার্স ২০২২ সালের ২৬ জুলাই নিবন্ধিত, ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এবং জেন ফিনটেক একই বছরের ২ আগস্ট নিবন্ধন পেয়েছে। এছাড়া, ট্রুপাই টেকনোলজিস নিবন্ধন পেয়েছে গত ২০২৩ সালের নভেম্বরে। আর সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফিনক্লুশন ভেঞ্চার্স- এর পূর্ব নাম ছিল টেলেকম এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১১ সালে কোম্পানিটি নিবন্ধিত হয়। ২০১৯ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ফিনক্লুশন ভেঞ্চার্স করা হয়।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মেমোরেন্ডাম অনুসারে, কোম্পানির অনুমোদিত শেয়ার মূলধনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা; প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০ টাকা করে মোট ৫০ কোটি সাধারণ শেয়ারে বিভক্ত। প্রত্যেক শেয়ারের নিজস্ব অধিকার, সুবিধা ও শর্তাবলী রয়েছে। কোম্পানির মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের সংখ্যা ১২.৫০ কোটি। এরমধ্যে তিন কোম্পানি– ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি, ব্লু হেভেন ভেঞ্চার্স এলএলসি, এবং ফিনক্লুশন ভেঞ্চার্স প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানা সাধারণ শেয়ারের ১০ শতাংশের লিমিট ছাড়িয়ে গেছে।
নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের সংখ্যা ১২.৫০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ওসিরিস ক্যাপিটাল পার্টনার্স এলএলসি ৬.২২৫ কোটি শেয়ারের বৃহত্তম অংশের মালিক, যা ব্যাংকের মোট শেয়ারের প্রায় অর্ধেকের (৪৯.৮০%) প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে 'নগদ'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক। আরেক মার্কিন কোম্পানি ব্লু হ্যাভেন ভেঞ্চারস এলএলসির হাতে রয়েছে ৩ কোটি ১২৫ লাখ শেয়ার, যা ২৪.৯০ শতাংশ মালিকানার সমান। তাদের প্রতিনিধি সামিট গ্রুপ অব কোম্পানিসের পরিচালক মুহাম্মদ ফরিদ খান।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফিনক্লুশন ভেঞ্চারস পিটিই লিমিটেডের ১.৩৭৫ কোটি শেয়ার রয়েছে, যার অর্থ নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ১১ শতাংশ মালিকানার সমান। নগদের একজন কর্মকর্তা নকিব চৌধুরী, ফ্লাক্লুশন ভেঞ্চারসের প্রতিনিধি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপর কোম্পানি জেন ফিনটেক এলএলসি নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের ৬২.৫০ লাখ শেয়ারের মালিক, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ। কোম্পানিটির প্রতিনিধি হিসেবে এসব শেয়ারের মালিকানায় রয়েছেন ড্যানিয়েল ভিনসেন্ট। অন্যদিকে, ট্রুপাই টেকনোলজিস এলএলসি ব্যাংকটির ৪০ লাখ শেয়ারের মালিক, যা মোট শেয়ারের ৩.২ শতাংশ। এই কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে এসব শেয়ারের মালিকানায় রয়েছে জেরিন আহমেদ আঁখি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফারহান করিম খান ৬২.৫০ লাখ শেয়ারের মালিক, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫ শতাংশ।
ঢাকার পুরানা পল্টনের ফিনটেকচুয়াল হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে মারুফুল ইসলাম ঝলক নগদের ১২.৫০ লাখ শেয়ারের মালিক, যা মোট শেয়ারের ১ শতাংশ।