ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় ত্রিপুরাসহ উত্তরপশ্চিম ভারতে রেড অ্যালার্ট জারি
প্রভাত রিপোর্ট : আবারও ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশে কয়েকটি এলাকা। কেননাÑ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি দরজা খুলে দিয়েছে ভারত। প্রবল বৃষ্টির কারণে দেশটির বিহার ও ঝাড়খ- রাজ্যে বন্যা ও পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার এই বাঁধ খুলে দেয়া হল। এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত। এদিকে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কায় ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সোমবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ ও তৎসংলগ্ন পূর্ব রাজস্থানে অবস্থানরত নি¤œচাপ গভীর নি¤œচাপে পরিণত হওয়ায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের বিষয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়ার ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি)। রেড অ্যালার্ট জারি করা রাজ্যগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ত্রিপুরাও রয়েছে। এই রাজ্যে সাম্প্রতিক রেকর্ড বর্ষণের কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। যে কারণে ভারতের এসব রাজ্যে আবার নতুন করে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত দেখা দিলে তা বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।
ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বলছে, বিহার ও ঝাড়খ-ে বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পানির চাপ সামলাতে ফারাক্কা বাঁধের সব দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে একদিনে বাংলাদেশে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবেশ করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে যে পরিমাণ পানি আসছে, সেই পরিমাণ পানি ছাড়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধে পানির অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে পানি বেশি হওয়ায় তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি না ছাড়া হলে ফারাক্কা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশটির ওই সংবাদমাধ্যম বলেছে, ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এদিকে এই পানি ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে পানি ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বিহার, ঝাড়খ-সহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় গঙ্গায় হু হু করে পানি বাড়ছে।
ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেশি ২ রাজ্যÑ বিহার, ঝাড়খ-ে বন্যা দেখা দেয়ায় ফারাক্কা বাঁধে পানির চাপ রয়েছে। তবে নেপালের পাহাড় থেকে এখনও কোনও পানি নেমে আসায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমা থেকে ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গেট খুলতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলে পানির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ১৯৬২ সালে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল।
আইএমডির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজস্থানের চিতোরগড় থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে একটি গভীর নি¤œচাপ অবস্থান করছে। ২৯ আগস্টের মধ্যে এই গভীর নি¤œচাপ পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে দক্ষিণ রাজস্থান ও গুজরাটে ব্যাপক বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। পরে গভীর নি¤œচাপটি সৌরাষ্ট্র, কচ্ছ হয়ে পাকিস্তানের কিছু অংশে পৌঁছাতে পারে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, বাংলাদেশ ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর আরেকটি নি¤œচাপ গভীর নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; যা উত্তর ওড়িশা এবং ঝাড়খ-ের মতো অঞ্চলগুলোতে প্রভাব ফেলতে পারে। এ সময় তীব্র বাতাসের পাশাপাশি সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠতে পারে। যে কারণে সম্ভাব্য বন্যার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে আইএমডি মৎস্যজীবী, কৃষক এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সোমবার আইএমডির জারি করা পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং গোয়ায় আগামী ২ থেকে ৩ দিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরাতেও একই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। এসব এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ।
আইএমডি বলেছে, কোঙ্কন, গোয়া, মহারাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চল, ওড়িশা, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খ-েও আগামী দুদিন ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। দেশটির এই আবহাওয়া বিভাগ লোকজনকে শক্তিশালী বাতাসের বিষয়েও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। আইএমডি বলেছে, সোমবার মধ্যপ্রদেশে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং সোম ও মঙ্গলবার দক্ষিণ রাজস্থানে ৬০ কিলোমিটারে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া গুজরাট ও সীমান্ত লাগোয়া পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলের পাশাপাশি উত্তর মহারাষ্ট্র এবং উত্তর-পূর্ব আরব সাগরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বৈরী এই পরিস্থিতিতে বন্যা, রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ও জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইএমডি। দেশটির এই সংস্থা বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বন্যার কারণে ভূমিধস ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিও রয়েছে।