প্রভাত রিপোর্ট : বন্যার্তদের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) পঞ্চম দিনের মতো চলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ কর্মসূচি। কর্মসূচিতে নগদ অর্থসহ নানা সহায়তা দিচ্ছেন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই। সহযোগিতা এসেছে উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল থেকেও। গতকাল সোমবার সকালে টিএসসি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে আরও দেখা যায়, ছোট ছোট পিকআপে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসছে ত্রাণের জন্য। ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়েও আসছেন অনেকে সহায়তা করতে। আবার অনেকে এসেছেন হেঁটেও। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার আমতলী মডেল স্কুল থেকে ইউএন ভলান্টিয়ার আমেনা খাতুন আলপনা ও কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে রথীন্দ্র প্রসাদ পান্ডের হয়ে সহযোগিতা নিয়ে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক ইশাত। তিনি বলেন, এত প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও সহযোগিতা সম্পৃক্ততার একটা চিন্তা এসেছে, এটা অভাবনীয়। যেহেতু ওখান থেকে ওদের আসা সম্ভব না তাই ওরা আমার মাধ্যমে এটি পাঠিয়েছে।
ঢাকার একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইনায়া বলেন, এই বন্যা পরিস্থিতি আনফরচুনেটলি হয়েছে। আমি তো শুরুর দিকে ভেবেছিলাম মানুষের মধ্যে মানবিকতা হারিয়ে গেছে। কিন্তু দেখলাম সবাই সবার জায়গা থেকে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে জায়গা থেকে আমিও এসেছি কিছুটা সহযোগিতা করতে।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. রমজান আলী বলেন, আমরা সবাই মানুষ। সবাই সবাইকে সহযোগিতার জন্যই এখানে আসা এবং আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সেটাই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে এসেছি।
প্রসঙ্গত, টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর, ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গত ২২ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। গত ৪ দিনে তে অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট পাঁচ কোটি ২৩ লাখ তিন হাজার ৬০৩ টাকা ৬৮ পয়সা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন খাতে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ টাকা।
ব্যয় করা অর্থ ত্রাণসামগ্রী, জরুরি ওষুধ, ত্রাণসামগ্রী রাখার ব্যাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার ক্রয় করতে ব্যয় হয়। তার মধ্যে খেজুর বাবদ ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯০০ টাকা, মুড়ি বাবদ ৪ লাখ ৩০০ টাকা, বিস্কুট বাবদ ২ লাখ এক হাজার ৫০ টাকা, গুড় বাবদ ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ টাকা, ভলান্টিয়ারদের রাত ও দুপুরের খাবার ৩৯ হাজার টাকা, পলিথিন এক লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, বস্তা এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা, চিনি আড়াই লাখ টাকা, রিকশা ও ভ্যান ভাড়া ৬৫০ টাকা এবং দড়ি, কলম ও কার্টার বাবদ ৭৩০ টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া গাড়ির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক আট হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।