প্রভাত রিপোর্ট : সচিবালয়ে যারা আনসারদের ছদ্মবেশে এসেছিল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। যারা ষড়যন্ত্র করতে এসেছিল তারা সফল হবে না। প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল সোমবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ আহতদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, সচিবালয় গত রবিবার ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারত, ছাত্ররা সেটি মোকাবিলা করেছে। আনসারের ছদ্মবেশ নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করতে এসেছিল। তাদের দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য ছিল না। এসব ষড়যন্ত্রকারীকে ছাত্র-জনতা রুখে দিয়েছে। তিনি বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর অবস্থা আগের থেকে মোটামুটি ভালো।
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। তার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে আটক রাখার খবরে সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসময় আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। তখন কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে আনসার সদস্যরা। পরে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আনসার সদস্যরাও পিছু হটে। প্রথমদিকে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হলেও একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি এবং পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
আনসার সদস্যরা রবিবার দিনভর সচিবালয়ের সামনে আন্দোলন করেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস এবং নানাভাবে চেষ্টা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করেন। সেখানে আটকা পড়েন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমও। তারা রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুক পোস্টে আটক রাখার বিষয়টি জানালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এর আগে গত রবিবার রাতে সচিবালয়ে আনসারদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেওয়ার পরও বাহিনীটির একটি দল সচিবালয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের আটকে রেখেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করেছেন বলে ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের সামনে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের উদ্দেশ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন আনসার সদস্যরা। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হয়ে আনসার সদস্যদের ধাওয়া করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন আনসাররা। গুলি, লাঠিপেটা ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।