প্রভাত রিপোর্ট : তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত কারিগরি সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে। একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ টিম আগামী অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প এলাকা নির্দিষ্টকরা, কি পরিমাণ পানি ধারণক্ষমতার জলাধার নির্মাণ এবং বাংলাদেশে মোট কি পরিমাণ পানি প্রয়োজনÑ প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, যাচাই, বিশ্লেষণ করবে এই কমিটি। কিন্তু আসন্ন শুকনো মৌসুমেই বিশেষজ্ঞ দলের বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা কম।
যৌথ নদী কমিশন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের সময়েই যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ থেকে তাদের ভারতীয় প্রতিপক্ষের কাছে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল কত সদস্যের হতে পারে, তারা কবে নাগাদ আসতে পারেন এবং কতদিন এখানে অবস্থান করতে পারেনÑ এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। যৌথ নদী কমিশন, ভারত থেকে বাংলাদেশকে অবহিত করার কথা জানানো হয়। ত্রিপুরা ও বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যাপরিস্থিতির কারণে এনিয়ে আর আলোচনা হয়নি। প্রত্যাশিত সময়ে, এমনকি এবছর তারা না-ও আসতে পারেন। যৌথ নদী কমিশন, ভারত থেকে ফিরতি জবাব এখনও পায়নি যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ। পরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে ভারত তার প্রত্যাশিত সব সমস্যারই সুরাহা পেয়েছে। স্থল, আকাশ ও নৌপথে পণ্য পরিবহন, অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিকসহ সব ক্ষেত্রে ভারত তার চাহিদা অনুযায়ী সুবিধা নিলেও বাংলাদেশকে দিয়েছে কমই। তিস্তার পানি সমস্যায় জর্জড়িত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল। শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানির অভাবে বৃহত্তর রংপুরসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের সেচ, কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় এসে তিস্তার পানি বণ্টনে অস্থায়ী একটি চুক্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে তা কার্যকর করা হয়নি। শেখ হাসিনার তিন মেয়াদের শাসনামলে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিদায় নেয়ার কয়েক মাস আগে তিস্তা মহাপরিকল্পনা ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন বা নতুন চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে কথা শোনা গিয়েছিল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে জরিপ চালাতে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কিছু দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা-ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে তিস্তা বিধৌত এলাকার কৃষি জমির পরিমাণ, কি পরিমাণ পানি ধারণক্ষমতার জলাশয় নির্মাণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হতে পারে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কত বছর লাগবে প্রভৃতি বিষয়ে স্টাডি করবে ভারতীয় প্রতিনিধি দল। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী। চীনও এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে। চীন একটি স্টাডিও করেছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে।
দেশের পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা ভারত ও চীনের এই সহযোগিতার মনোভাবকে প্রশংসার চোখেই দেখছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ বছর। কোন কোন মহল অবশ্য ৫ বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছে। প্রশ্ন হচ্ছেতিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তী সময়ে কি হবে? এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ পানি পাবে কোত্থেকে, তিস্তার পানি পাওয়ার নিশ্চিয়তা কে দেবে। তিস্তার প্রবাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে কিভাবে?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে এ ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে গতানুগতিক মৌখিক আশ^াস ছাড়া কিছু পায়নি বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের সময়ও এ সমস্যার সুরাহা হয়নি। শুকনো মৌসুম আসন্ন। নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এপ্রিল পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে তিস্তার প্রবাহ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা নেই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অন্তবর্তী চুক্তি জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মহল মনে করেন।