বিশেষ প্রতিনিধি : ইতিহাসে নাম লেখালেন লিটন-মিরাজ। পথহারা বাংলাদেশ দলের হাল ধরে শুধু দলকেই নিরাপদ করেননি, নিজেরাও ঢুকে গেছেন ইতিহাসের পাতায়। টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ছয় উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেট জুটিতে শতরান তুলে এই রেকর্ড করেন বাংলাদেশ দলের উইকেট কিপার ব্যাটার লিটন কুমার দাস এবং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ ফলোঅন এড়াতে পারবে কিনা এমন সন্দেহ এবং সংশয়ের মধ্যে সাহসী সব শট খেলে দলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। প্রায় দুটি সেশন স্বাগতিক বোলারদের ওপর কর্তৃত্ব করেন এই দুই ব্যাটার। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে খুররামের বলে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হওয়ার পর ভাঙ্গে ১৬৫ রানের রেকর্ড এই জুটি। ৭৮ রানে তুলে মিরাজ সাজঘরে ফেরেন।
শেষ বিকেলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর বেশি দুর এগুতে পারলেন না লিটন কুমার দাস। লিটনের ইনিংসটি থেমেছে ১৩৮ রানে। লংঅনে সাইম আইয়ুবের তালুবন্দি হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় ড্রেসিংরুমের হাততালি বলে দিচ্ছিলো লিটনের এই ইনিংসটি বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।চেষ্টা করেছিলেন দলকে লিড এনে দিতে কিন্তু পারেননি। পাকিস্তানের করা ২৭৪ রানের জবাবে ২৬২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ২২৮ বলে ৪টি ছয় ও ১৩টি চারে লিটন রাজকীয়ভাবে ফেরেন ড্রেসিংরুমে।
মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এর আগে করেন বিশ্বরেকর্ড। ৬৫তম ওভাবের পঞ্চম বলে চার মেরে নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি করেন লিটন। আর মিরাজকে নিয়ে গড়েন রেকর্ড।
ফলোঅনের শঙ্কায় পড়া বাংলাদেশকে মিরাজ-লিটনের রেকর্ড জুটি উদ্ধার করে। প্রায় দুটিসেশন স্বাগতিকদের ওপর কর্তৃত্ব করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে খুররামের বলে ভেঙেছে ১৬৫ রানের রেকর্ড এই জুটি। যেখানে ফলোঅন এড়ানোই কঠিন ছিলো। কারণ মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়ানো যাবে কি যাবেনা সেই অনিশ্চয়তা দুলছিলো। আর তখনি লিটন ও মিরাজ নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন। সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রান করেন এই জুটি। মূলত কিছুটা এলোমেলো শট খেলে মিরাজ আউট হোন ৫২তম ওভারে। খুররাম শেহজাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৭৮ রানে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান।
আউট হওয়ার আগ মুহূর্তে এই দুইজন করেন নতুন ইতিহাস। টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে ১০০প্লাস রানের জুটি এর আগে ছিলো মাত্র দুটি। কাল মিরাজ ও লিটন তৃতীয় রেকর্ড গড়লেন। ফলোঅন এড়ানোর পর দুজনে ফিফটিও তুলে নিয়েছেন। লিটন পেয়েছেন ১৮তম হাফসেঞ্চুরি। মিরাজ পেয়েছেন অষ্টম। এর আগে বিনা উইকেটে ১০ রানে মাঠে নেমে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিলো লিড নেয়ার। কিন্তু নড়বড়ে ব্যাটিংয়ে প্রথম ঘণ্টাতেই বাংলাদেশকে ধ্বসংস্তূপে পরিণত করেন পাকিস্তানের দুই পেসার মির হামজা ও খুররাম শাহজাদ। তাদের আঘাতে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় টাইগাররা। তাতে ফলোঅনে পড়ার শঙ্কাও জাগে। তারপর অবশ্য শেষ ঘন্টাতে সপ্তম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে খেলেছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
আর্ন্তজাতিক ওয়ানডেতেও ৫০ রানের কমে প্রথম ৬ উইকেট হারানোর পর সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটিতে আছে মিরাজের নাম। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ১৭৪ রানের জুটি গড়েন মিরাজ।
লিটনের আগের তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরি এসেছিল ২০২১ ও ২০২২ সালে ছয় মাসের মধ্যে। ৮ টেস্টে ৩টি সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছিলেন ৪টি ফিফটি। সেই ৪ ফিফটির দুটি ছিল আবার ৮৬ ও ৮৮ রানের। টেস্ট ক্রিকেটে লিটনের সেরা সময় ওটাই। কালকের সেঞ্চুরিতে ঘুচেছে প্রায় সোয়া দুই বছরের খরা। মাঝখানে ৯ টেস্টে ৫টি ফিফটি করলেও তার একটিকেও সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত যখন তা পারলেন, আগের তিন সেঞ্চুরির দুটির সঙ্গেই এর মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। টেস্টে লিটনের চার সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে দলের বিপর্যয়কালে। রেকর্ডও হয়ে গেছে একটা। দলের স্কোর পঞ্চাশের কম থাকা অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচের নিচে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান লিটন। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের ওই ১১৪ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ৪৯ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। লিটনের ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৪১ রানের ইনিংসটি ২০২২ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে। সেবারও নেমেছিলেন ২৪ রানে পঞ্চম উইকেট পড়ে যাওয়ার পর। ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পাওয়া দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটির সময়ই একটু শান্তিতে ব্যাটিং করতে পেরেছিলেন লিটন। সেবার ব্যাটিং করেছিলেন ৫ নম্বরে, ১০৫ রানে তৃতীয় উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নামেন।
টেস্টে সপ্তম উইকেটে সর্বোচ্চ
(৫০ রানের কমে ৬ উইকেট হারানোর পর)
রান জুটি দল বিপক্ষ ভেন্যু সাল
১৬৫ লিটন- মিরাজ বাংলাদেশ পাকিস্তান রাওয়ালপিন্ডি ২০২৪
১১৫ রাজ্জাক-কামরান পাকিস্তান ভারত করাচি ২০০৬
১০০ বোনারদা-সিলভা উইন্ডিজ শ্রীলঙ্কা গল ২০২১