প্রভাত রিপোর্ট : দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আগস্টের শেষে এসে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। কিছু জায়গায় পানি নামতে শুরু করলেও নিচু অঞ্চলগুলোতে এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে প্রচুর মানুষ। খাল-বিল, নদী-নালার প্রবাহ বন্ধ থাকায় এই পানি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিশ্লেষকরা বলছেন, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে বাসস্থান, কৃষি, মৎস্য ও স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। ত্রাণ সরবরাহের শত চেষ্টার পরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাহাকার থামানো যায়নি, পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। মানুষ যখন বাড়ি ফিরে ঘর পাবে না, তখন তার জীবন আরও শঙ্কায় পড়বে। দেশের কিছু জেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এখনও দেশের ১১টি জেলায় ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
পানি নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. ইফতেখার আহমেদ নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় বন্যা-পরবর্তী ডায়রিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রতিটি ফার্মেসিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ রাখতে নির্দেশ দেন। এ সময় কোনোভাবেই ওষুধের দাম বাড়ানো যাবে না বলেও উল্লেখ করেন।
এদিকে বেশ কিছু স্বাস্থ্যসেবাদান কেন্দ্র বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় যথাযথ চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হয়েছে পুরো সময়। স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্স ও ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিমের ব্যবস্থা করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, পানি যখন থাকে, তখন পানিতে ডুবে মৃত্যুর শঙ্কা থাকে। পানি কমে যাওয়ার পর তিন ধরনের রোগ ভোগায়। এর মধ্যে রয়েছে পেটের সমস্যা, টাইফয়েড-প্যারা টাইফয়েড, হেপাটাইসিস। এ ছাড়া ছত্রাকের সংক্রমণ, পচড়া, ত্বকের অ্যালার্জিসহ ত্বকের অসুখ বাড়ে। পাশাপাশি শ্বাসের টান, হাঁচি-কাশি বেড়ে যায়।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রও পানিতে ডুবে যেতে দেখেছি আমরা। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার জন্য নৌ অ্যাম্বুলেন্স ও ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল টিমের ব্যবস্থা করা গেলে ভোগান্তি কমানো যাবে।
এদিকে এবারের বন্যায় দৃশ্যমান বড় ক্ষতি হয়েছে কৃষি খাতে। অনেক এলাকায় পাকা আউশ ধান তলিয়ে গেছে। রোপা আমনের বীজতলা, নতুন রোপণ করা আমন ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাণিজ্যিক সবজি ক্ষেত ছাড়াও বসতবাড়ি লাগোয়া মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, ঢ্যাঁড়শ, করলা, বেগুনখেত তলিয়ে গেছে পানির নিচে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল আম, কাঁঠাল, লেবু, আনারস, কলা, পেঁপে, সফেদাও নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বেরিয়ে গেছে পুকুরে চাষ করা মাছ। বাড়িতে পালিত হাঁস-মুরগি মারা গেছে। এই পরিস্থিতিতে পুনর্বাসনের কাজে কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা।