রুবেল সরকার, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলার ছোট-বড় বিভিন্ন হাটবাজারে পাকা তাল বিক্রি জমে উঠেছে। ইতিমধ্যে গ্রামগঞ্জে পিঠা তৈরির ধুম পড়েছে। পরিবারের ছোট ছোট সদস্যদের বায়নাতে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত পরিবারের সদস্যরা। সমেশপুর হাটে পাকা তাল কিন্তু আসার গৃহিণী আরিফা সুলতানা জানান, পাকা তাল থেকে সুস্বাদু রস অতি যতেœ সংগ্রহ করা হয়। দুই হাতে শক্তি দিয়ে চেপে তালের রস বের করতে হয়। পরে এই রস ভালো করে আঁশমুক্ত করতে হয়। সংগৃহীত রসের সঙ্গে নারিকেল, চিনি বা গুড় এবং চালের গুঁড়ো বা ময়দা মিশিয়ে সুস্বাদু পিঠা তৈরি করা যায়। গরম তেলে ভেজে তালবড়া তৈরি করা যায়। সুজি, নারিকেল, চিনি বা গুড় মিশিয়ে খির তৈরি করা যায়। একইভাবে মালপোয়া ও পাটিসাপটাসহ অন্যান্য পিঠা তৈরি করা হয় তালের রস থেকে। চর রায়পুর গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা ফারজানা হক জানান, গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পিঠা ‘তালের পিঠা’। এই পিঠা তৈরিতে অনেক কষ্ট হয়।
বেলকুচি সমেশপুর হাটের তাল বিক্রেতা সাইদুল বলেন, গ্রাম থেকে পাকা তাল সংগ্রহ করে হাটবাজারে বিক্রি করি। আকারভেদে প্রতিটি তাল ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি থাকি।
লবি রহমান কুকিং ফাউন্ডেশন। সিরাজগঞ্জ এর প্রেসিডেন্ট মোছা .জান্নাতুন্নাহার বলেন, এখন চলছে ভাদ্র মাস। তাল পাকার সময়। বাজারে দেখা যাচ্ছে নানা আকারের তাল কেনা বেচার দৃশ্য। তালের রস সব সময় সনাতন পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হয়। পাকা তালের খোসা ছাড়িয়ে আঁটি গুলো কে ১ কাপ পানিতে ডুবিয়ে হাত দিয়ে মথে তালের রস বা কাথ বের করে এগুলো কে ছাঁকনী দিয়ে ছেঁকে চিনি অথবা গুড় ,কোড়ানো নারকেল, দুধ ও চালের গুড়া ইত্যাদি মিশিয়ে নানা রকম পিঠা গ্রামে গঞ্জে এমন কি শহরাঞ্চলেও তৈরী করা হয়।একটি মাঝারী আকারের তাল দিয়ে ১ থেকে দের কেজি পরিমান রস পাওয়া যায়। তাল দিয়ে বানানো পিঠা গুলির মধ্যে, বিবি খানা পিঠা, চাপটি পিঠা, তালের বড়া , খিলি পিঠা তালের মলপোয়া ইত্যাদী বানানো হয়। তালের রসের পায়েস ও ফিরনী ও খুব প্রচলিত। এছাড়াও তালের গুড় ও উত্তর বঙ্গে খুব জনপ্রিয়। তিনি তাল দিয়ে সিরাজগঞ্জের বিখ্যাত পিঠার উপকরন ও প্রনালী দিয়েছে সেটি হলো। ২০ থেকে ২৫টি পরিস্কার কাঁঠাল পাতা ,২৫০ গ্রাম তালের কাথ্ব ,২০০গ্রাম চিনি/ গুড় , ৪ টেবিল চামচ গুড়া দুধ, চুলায় জ্বাল করে ঠান্ডা করে ,এর মধ্যে ৪ কাপ চালের গুড়া ও ১চিমটি লবন দিয়ে ডো তৈরী করতে হবে। এর পর পরিস্কার করে নেয়া কাঁঠালের পাতা গুলো মুছে এর উপর ডো দিয়ে পাতার শেপে পিঠা বানিয়ে আরেক টি পাতা দিয়ে ঢেকে তাওয়া বা প্যানে বসিয়ে মাঝারী আঁচে পিঠার ২ পাশে চুলায় সেঁকে এই পিঠা গুলি বানাতে হয়। কলার পাতার বিকল্প হিসেবে কাঁঠাল পাতায় বানানো তালের এই পিঠা গুলী তেল ছাড়া বানানো হয় বলে এটি যথেস্ট স্বাস্থ্যকর। হাল্কা মিস্টি স্বাদের এই পিঠা গুলি দেখতে পাতার মত হয় বলে পরিবেশনেও বেশ নান্দনীকতা ফুটে ওঠে।