প্রভাত রিপোর্ট : নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের সাইড লাইনে ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সার্কভুক্ত দেশের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করতে চান একইসঙ্গে সার্কনেতাদের সঙ্গে ফটোসেশন করতে চান। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সব সদস্য রাষ্ট্রের সরকার প্রধানদের একত্র করে ছবি তোলার চেষ্টা চালাবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের তৃতীয় অংশ শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রসঙ্গত আগামী মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের দেয়া বক্তাদের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, সাধারণ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে ২৬ সেপ্টেম্বর।
প্রসঙ্গত সার্ক হলো দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। সার্কের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে সার্কের জন্ম হয়। এর সদস্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন আয়োজিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেনা ক্যাম্পে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত এতে যোগ দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ, ভুটান ও আফগানিস্তানও সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকার করায় সম্মেলনটি বাতিল হয়ে যায়।
পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, অবশ্যই আমরা (নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে) দেখা করার চেষ্টা করব। আমি সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের একসঙ্গে এনে একটি ছবি তোলার চেষ্টাও করব। মহৎ একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সার্ক জোট গঠন করা হয়েছিল। এখন এর অস্তিত্ব শুধু কাগজেকলমে। বাস্তবে সার্কের কোনো কার্যকারিতা নেই। আমরা সার্কের নামই ভুলতে বসেছি। আমি সার্কের চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে সার্ক সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে না। আমরা সবাই একত্র হলে, অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, সার্কের মতো একই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিষ্ঠিত হলেও ইউরোপের জোটটি পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে অনেক বড় বড় লক্ষ্য অর্জন করেছে। সে তুলনায় সার্কের প্রাপ্তি প্রায় শূন্যের কোঠায়।
ড. ইউনূস পিটিআইকে বলেন, ইউরোপের দেশগুলো ইইউ থেকে অনেক কিছু অর্জন করেছে। আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে যাতে সার্ক কার্যকর থাকে। ইইউর দিকে তাকান, এটি অসাধারণ একটি জোট। পাকিস্তান নিয়ে সমস্যা থাকলে ভিন্নভাবে সমস্যার সমাধান হতে পারে। কিন্তু সার্কের কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে না। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিয়ানমারকে তাদের নিজ দেশের জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং এ বিষয়টি তাদেরকে বোঝানোর জন্য ভারতের সহায়তা চাইবেন তিনি। এই সংকটের মোকাবিলায় চীন-ভারত, উভয়েরই সাহায্য প্রয়োজন।
ড. ইউনূস বলেন, এ বিষয়টির (রোহিঙ্গা) সুরাহা করতে আমাদের ভারত ও চীন, উভয়ের সহায়তা প্রয়োজন। প্রায় ১০ লাখ মানুষ (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে এসেছেন এবং তাদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ভয়াবহ চাপ পড়ছে। কয়েকটি দেশ তাদেরকে গ্রহণ করেছে, কিন্তু এটি সংখ্যায় খুবই কম। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ভালো। তাই মিয়ানমারকে বিষয়টি বোঝানোর জন্য ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।