মৃণাল বন্দ্য, কানাডা থেকে : বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বন্ধ, মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট, চাঁদাবাজি, প্রকাশ্যে দেশ ছাড়ার হুমকির প্রতিবাদে কানাডার রাজধানী অটোয়াস্থ ফেডারেল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বিশাল সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এসময় ভেতরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছিল।
সরকারী ও বিরোধী দলের বহু সংসদ সদস্য বাইরে এসে সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের কথা শোনেন এবং বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ আয়োজনকারী নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নির্যাতনের বিষয়ে কানাডা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এব্যাপারে উপযুক্ত ভূমিকা রাখার আহবান জানান। সরকার ও বিরোধী দলীয় নেতৃস্থানীয় প্রায় দশ জন সংসদ সদস্য দীর্ঘক্ষণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন। তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে সংসদে উত্থাপন করবেন বলে জানান।
তাঁদের কাছে কানাডা সরকার ও বিরোধী দল বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়। একই দিন অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনেও একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
টরন্টো, মন্ট্রিয়ল সহ কানাডার অন্যান্য শহর থেকে প্রচুর সংখ্যক অংশগ্রহনকারীরা ঐদিন সকালে অটোয়া এসে পৌঁছান। দূর দূরান্ত থেকে আসা প্রবাসী বাংলাদেশী হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে। পার্লামেন্ট ভবনের পুরো এলাকা যেন তখন বাংলাদেশের একটি অংশ হয়ে ওঠে। সকল ধর্মের মানুষের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মত।
তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন। দুপুরে কর্মসূচি শুরু করা হয় বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। কয়েক ঘন্টা ব্যাপী সমাবেশে শ্লোগানের ফাঁকে ফাঁকে সমবেত কন্ঠে দেশাত্মবোধক গান করেন তাঁরা। এসময় বাংলাদেশে স্বজন পরিজনদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এখানকার হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আদিবাসী, পাহাড়ি সকলের গগনবিদারী শ্লোগানে পার্লামেন্ট চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রতিবাদ সমাবেশে মূলধারার লোকজনও এসে সংহতি প্রকাশ করেন।
সমাবেশের আয়োজকরা বাংলাদেশে নির্বাচন ও যেকোনো রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে সরকারগুলোর নীরব ভূমিকা দুর্বৃত্তদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদ হিসেবেই গণ্য করা যায় বলে অভিযোগ করেন সমাবেশে আগত লোকজন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত একটি সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনারও বিচার হয়নি। বরং মিথ্যা, সাজানো ঘটনা ঘটিয়ে গ্রামের পর গ্রাম হিন্দু বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, নিরীহ হিন্দুদের মামলা দিয়ে কারান্তরিন করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের জমি জমা দখল, হত্যা, ধর্ষণ, মূর্তি ভাঙ্গা, জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করণের ঘটনা ঘটছে। তাঁরা বলেন, এখন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সরকারী কর্মকর্তাদেরও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাধ্যতামূলক অবসরে অথবা চাকুরীচ্যূত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু শূন্য করার চক্রান্ত হচ্ছে দাবী করে তাঁরা অনেক ঘটনা মিডিয়ায়ও আসতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন। তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ দেশে যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার যে ‘অভয়’ দিয়ে যাচ্ছেন, বাস্তবে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না অভিযোগ করে বলেন, যদি মনে প্রাণে সেটি ধারণ করেন তাহলে প্রকৃত অর্থে দ্রুতই তা দৃশ্যমান হওয়ার কথা। তাঁরা অন্তর্বতী সরকারের কাছে সকল নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার আহবান জানান। সমাবেশে এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও প্রভাবশালী বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই দিন অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনেও একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতনের দ্রুত সুষ্ঠু বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবীতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।