প্রভাত রিপোর্ট : শ্রীলংকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয়ের পর অবসরের ফুসরত পায়নি বাংলাদেশ। বিমানে চেপে আসতে হয়েছে নিউইয়র্কে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া স্বাগত জানিয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলকে। এই শহরেই সোমবার মাঠে নামছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। রাত সাড়ে আটটায় এইডেন মার্করামের দলের মুখোমুখি হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। সর্বশেষ ম্যাচেই বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দু’দলই কষ্ট করে জিতেছে। শক্তির বিচারে প্রোটিয়ারা এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ যে ছেড়ে কথা কইবেনা এটা বলাই যায়।
‘ডি’ গ্রুপে সূচনাটা ভালোই হয়েছে বাংলাদেশের জন্য। কিছুটা কষ্ট করতে হলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রেস্টিজিয়াস ম্যাচে ঠিকই জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। গ্রুপে বাংলাদেশের পরের ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে। নিউইয়র্কে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে যাদের বিপক্ষে কোনো জয় নেই টাইগারদের। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পর্ক বেশ পুরাতন। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার এডি বারলো বাংলাদেশের কোচ হয়েছিলেন।
গত বিশ্বকাপে ছিলেন প্রোটিয়া কিংবদন্তি অ্যালান ডোনাল্ড। তার আগেও ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। বাংলাদেশ অধ্যায় শেষ হলেও এখনও টাইগার ক্রিকেটকে নজরে রেখেছেন ডোনাল্ড। সাবেক শিষ্যদের পারফরম্যান্সে বেশ উচ্ছ্বসিত তিনি। ম্যাচ না দেখলেও পরে হাইলাইটস দেখতে ভুল করেননি। ডোনাল্ড বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাজ্য থেকে কেবলই পারিবারিক ছুটি কাটিয়ে ঘরে ফিরেছি আমি। দূর্ভাগ্যবশত খেলাটা আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তারপরেও আমাদের এখানে সুপারস্পোর্টসে পুরো হাইলাইটস দেখানো হয়েছে। পেসারদের নিয়ে আমি খুবই খুশি। মুস্তাফিজের তিন উইকেট, তাসকিনের দুটা আর তানজিম একটা। দারুণ পারফরম্যান্স ছিল। তাসকিন এখন পেস বিভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার জন্য বিষয়টা দারুণ দেখে ভালোই লাগছে। তাদের সবার জন্যই ভালো লাগছে।’ বাংলাদেশের জয়ে খুশি হলেও, সাবেক গুরু ডোনাল্ড কিছুটা অসন্তোষ বেশি উইকেট হারানোর কারণে।
তার মতে, আরও আগেই ম্যাচ জেতা উচিৎ ছিল টাইগারদের, ‘আমার মনে হয়নি বাংলাদেশ এমন খেলবে, যেখানে আট উইকেট চলে যাবে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপের অবস্থাই এমন। উইকেট একেবারেই অচেনা। ১৪০-১৩৫ই অসাধারণ স্কোর। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও এখন তাই দেখছি। ওরা বেশ চাপে আছে ডাচদের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ৬ উইকেটের মধ্যেই ম্যাচ শেষ করা উচিত ছিল। ৮ উইকেট যাওয়া, ১৮ ওভার পর্যন্ত যাওয়া উচিত হয়নি।’ পরের ম্যাচ তারই নিজের দেশের বিপক্ষে। একদিকে দেশ, অন্যদিকে সাবেক শিষ্যরা। ডোনাল্ড বেছে নেবেন কাকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কিংবদন্তি এই পেসার বললেন, ‘একজন দক্ষিণ আফ্রিকার হিসেবে, আমি দক্ষিণ আফ্রিকাকেই বেছে নেবো-এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কিন্তু এটা এমন একটা খেলা, যেটা যেকোনো দিন, যে কারোরই হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সেটা করে দেখিয়েছে, আফগানিস্তান শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে বেশ সহজেই হারিয়েছে।’ ‘এটা বেশ কঠিন এক পিচ। বোলাররাই এখানে আধিপত্য দেখিয়েছে। বিশেষ করে পেসাররা। তাসকিন, শরিফুল, মুস্তাফিজরা ওরা সবাই দারুণ বোলার’।
এদিকে বাংলাদেশকে সুপার এইটে দেখছেন সাবেক অধিনায়খ বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। সাম্প্রতিক ব্যর্থতা ভুলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় দিয়ে করেছে বাংলাদেশ। ফলে এখন তাদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে সুপার এইটে ওঠার সুযোগ। দেশ ছাড়ার আগেই বাংলাদেশ অধিনায়ক এবং কোচ দুজনেই বলেছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে (সুপার এইট) খেলার লক্ষ্যের কথা। যদিও এরপর তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজে হেরে ব্যাকফুটে চলে যায়। সে অবস্থায় লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়টা আশা জোগাচ্ছে সাবেক অধিনায়ক সুজনকেও। বিসিবির এই পরিচালক বলেন, ‘জয় তো জয়ই। টেবিলের তিন নম্বরে আছি, এক ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে। তবে যদি আপনি যদি বলেনৃতৃপ্তির জয় না। অবশ্যই এর চেয়ে ভালোভাবে পার হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল আমাদের। সেই দলই আমরা, এর চেয়েও ভালো দল। আমি মনে করি ১২৫ রান অতিক্রম করতে গিয়ে আমাদের এতো কষ্ট করা দরকার ছিল না।’ তবুও টাইগারদের জয়টাকেই বড় স্বস্তি হিসেবে দেখছেন সুজন, ‘যেহেতু আমরা একটু চাপে ছিলাম। আমেরিকার সঙ্গে দুটি ম্যাচ হারলাম, ভারতের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচটাও শেষ করতে পারিনি জয় দিয়ে। অবশ্যই আমাদের ব্যাটিং গ্রুপ একটু চাপে ছিল। লিটন, সৌম্য, শান্তকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। চাপে ছিল যে এটা ওদের চেহারা দেখেই বুঝেছি, অনেক চাপে ছিল। তারপরও যে স্বস্তির জয়টি এসেছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রভাত/আসো