প্রভাত রিপোর্ট : বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ১০ জুন তারিখটা বিশেষ হতে পারত। প্রথমবারের মতো জয়ের দোড়গোড়ায় পৌছে গিয়েও ৪ রানে হারতে হয়েছে দক্ষিন আফ্রিকার কাছে। লো স্কোরিং ম্যাচে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে আম্পায়ারিং। যার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। আবারও প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড়িয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্যাম নোভাস্কি। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ডেডবল নাকি চার রান এই নিয়ে। এই রানটি হয়ে গেলে ম্যাচ ড্র এমনকি বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ছিল। সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল এরকম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্ট্রাইক এন্ডে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। লো-স্কোরিং ম্যাচে জয়ের জন্য পরিস্থিতি তখনও বাংলাদেশেরই নাগালে ছিল। ওটনিয়েল বার্টম্যানের ফুললেন্থের বলটা লেগস্ট্যাম্পের বাইরে চলেই যাচ্ছিল। তবে কিছুটা সরে আসা মাহমুদউল্লাহর প্যাড ছুঁয়ে যায় সেটি। বোলিং দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে খানিকটা দ্বিধা নিয়েই আঙুল তুলেছিলেন অনফিল্ড আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কি।
আম্পায়ার যখন আঙুল তুলছেন আউটের, ততক্ষণে বল সীমানাছাড়া। রিয়াদ রিভিউ নিয়েছেন, তাতে সিদ্ধান্তও বদলেছে। কিন্তু, লেগবাই থেকে চার রান বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে যুক্ত হয়নি। নোগাস্কি বলটিকে ডেডবল ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হেরেছে ওই চার রানেই। হারের কারণ হিসেবে আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কিকেই দুষছেন দেশের ক্রিকেটভক্তরা। সাবেক ক্রিকেটারদের মুখেও আম্পায়ারিং এর সমালোচনা। যদিও ডেডবল সংক্রান্ত ক্রিকেটের আইন আম্পায়ারের পক্ষেই কথা বলছে। ক্রিকেটের ২০.২ ধারায় পরিষ্কার বলা আছে, ম্যাচে ‘ডেড বল’ নির্ধারণের ক্ষমতা শুধুই আম্পায়ারের, ‘বল শেষ পর্যন্ত মীমাংসা (ওই ডেলিভারির খেলা) হয়েছে কি না, তা সিদ্ধান্ত নেবেন আম্পায়ার।’
প্রাসঙ্গিক আরেকটি ধারায় (২০.১.১.১) বলা হয়েছে, বল তখনই ‘ডেড’ হবে, ‘যখন তা উইকেটরক্ষক কিংবা বোলারের হাতে জমা পড়বে।’ সেই ধারায় আরও বলা হয়েছে, ‘বোলিং প্রান্তের আম্পায়ার যখন বুঝতে পারবেন, ফিল্ডিং দল ও ব্যাটসম্যানদের খেলা থেমেছে, তখনই সেটা ডেড বল।’ এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে যেতে পারে ২০.১.১.৩ ধারাও। যেখানে বলা হয়েছে, যে মুহূর্তে বলের সাপেক্ষে আউটের সিদ্ধান্ত আসবে, সেই মুহূর্ত থেকে এটি ডেডবল ঘোষণা করা হবে। যার অর্থ, আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কি, বার্টম্যানের আবেদনে আঙুল তোলার পর থেকেই সেটি ডেডবলই ছিল। এদিকে আম্পায়ারিং নিয়ে খেপেছেন বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার বিশ্লেষক। তীরে এসে তরি ডোবার গল্প তো বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৪ রানে। কাছাকাছি গিয়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় যখন পুড়ছে বাংলাদেশ দল, তখন কম্পিউটার বিশ্লেষক মহসিন শেখ তোপ দেগেছেন আম্পায়ারিং নিয়ে। আম্পায়ারিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মহসিন বাংলাদেশের ইনিংসের নির্দিষ্ট একটা ঘটনাকে উল্লেখ করেছেন।
১১৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৬.১ ওভারে বাংলাদেশ করেছে ৪ উইকেটে ৮৮ রান। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রোটিয়া পেসার ওটনিল বার্টম্যানকে ফ্লিক করতে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দক্ষিণ আফ্রিকা দল আবেদন করলে মাঠের আম্পায়ার স্যাম নোগাস্কি আউট দিয়ে দেন। একই সঙ্গে সেটা হয়ে যায় ৪। পরে রিভিউতে দেখা যায়, বল স্টাম্পে আঘাত হানেনি। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেওয়ায় ৪ রানও পায়নি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্ত-মাহমুদউল্লাহরা হেরে যান ৪ রানে। আম্পায়ারিং নিয়ে ফেসবুক পোস্টে মহসিন বলেন, ‘কোনো অজুহাত দিচ্ছি না। তবে এই নিয়মটা খুবই বাজে। বাজে আম্পায়ারিং কলের মাধ্যমে আমাদের থেকে ৪ রান কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ম্যাচটাও হেরেছি ৪ রানে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বিসিবি, আইসিসিকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। দল কখনো শাস্তি পেতে পারে না এমন ঘটনায়। খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় যে কাছাকাছি গিয়েও পাওয়া হলো না, তাতে সামাজিক মাধ্যমে আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ ঝেরেছেন অনেকেই।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন, ‘বাজে আম্পায়ারিং।’ অনেকের মতো তাওহিদ হৃদয়ও কাঠগড়ায় তুলেছেন ম্যাচের আম্পায়ারিংকে। এদিকে সাবেক নিউজিল্যান্ড পেস বোলার সাইমন ডুল বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বদলে ভারত থাকলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হতো’ সবমিলিয়ে আম্পায়ারিংয়ের কারণে আরেকটি বিজয় গাথা থেকে বঞ্চিত হলো বাংলাদেশ।
প্রভাত/আসো