শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

দেশে যে পরিমাণ ডলার আসছে তার চেয়ে বেশি বেরিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত - ১১ জুন, ২০২৪   ০৯:৫৯ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আর্থিক হিসাবের ঘাটতি ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো দেশে যে পরিমাণ ডলার ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে রিজার্ভ বাড়ছে না। দেশের আর্থিক হিসাবে এত বড় ঘাটতি এর আগে কখনই দেখা যায়নি। এ বিষয়টিই এখন ডলার সংকটের তীব্রতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। 

রফতানির বিপুল পরিমাণ অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার বিষয়টিও আর্থিক হিসাবের ঘাটতি বড় করা ও রিজার্ভ সংকটে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো রেমিট্যান্সের অর্থ দেশের চলতি হিসাবের উদ্বৃত্তকে ইতিবাচক ধারায় রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু আর্থিক হিসাবকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রফতানি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি রফতানির অপ্রত্যাবাসিত অর্থ ফিরিয়ে আনায়ও মনোযোগ বাড়াতে হবে। রফতানির বড় অংকের অর্থ অপ্রত্যাবাসিত থেকে যাওয়ার কারণে দেশে ট্রেড ক্রেডিটের নিট ঘাটতি এখন ক্রমেই বাড়ছে, যা আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি প্রকারান্তরে রিজার্ভের ক্ষয়েও অবদান রাখছে। 

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমুন্নত করতে নানামুখী উদ্যোগ চলমান রয়েছে দুই বছর ধরে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি গ্রহণের পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতেও নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এর ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহও বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স বেড়ে কভিড-পরবর্তী সময়ে (তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে) সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এ সময় প্রবাসীরা দেশে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রায় ২২৫ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষয় এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাবায়নের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ জুন পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন (১ হাজার ৮৬৭ কোটি ১৬ লাখ) ডলারের কিছু বেশি। এক সপ্তাহ আগে ২৯ মে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭২ বিলিয়নের কিছু বেশি (১ হাজার ৮৭২ কোটি ২৪ লাখ) ডলার। সে অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ কমেছে ৫ কোটি ডলারের বেশি। তবে বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করে পাওয়া রিজার্ভও দেশের নিট বা প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু দায় বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত এ হিসাব প্রকাশ করে না। তবে গত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফ মিশনকে জানানো হয়েছিল দেশে ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে। 

রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয় সম্পর্কে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে বিদেশী বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসছে না। রফতানিতে কিছু প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তা প্রত্যাশার চেয়ে কম। বিদেশীরা ঋণ প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড়Íদুই-ই কমিয়েছে। পুঁজিবাজারসহ বিভিন্ন খাত থেকে বিদেশীরা বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। মূলত এসব কারণেই দেশে রিজার্ভের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। আর রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। 
প্রভাত/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন