১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে অর্থবিল- ২০২৪ পাস হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি আয় কেউ যদি তার রিটার্নে প্রদর্শন করেন, তাহলে তাকে অডিটের আওতামুক্ত রাখার বিধান করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশই বহাল থাকছে।
শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিল পাসের প্রক্রিয়ায় জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবনার ওপর আলোচনায় অংশ নেন মো. হামিদুল হক খন্দকার, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, পংকজ নাথ, খান আহমেদ শুভ, আবুল কালাম, মো. আহসানুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রী অর্থবিলের ওপর আনা সংশোধনী তালিকার কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বাবি প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
এর আগে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখেন। বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও অর্থমন্ত্রীসহ ২৩৬ সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত ১১ জুন থেকে বাজেট আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা। এ নিয়ে ১১ দিন আলোচনা হয়।
বাজেটে ব্যক্তির সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও সংসদ তা গ্রহণ করেনি। এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ কর বিদ্যমান ২৫ শতাংশই বহাল থাকছে। বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী করহারের ধাপে কিছুটা পরিবর্তন এনে সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন।
ব্যক্তি করমুক্ত সিলিং আগের মতো সাড়ে তিন লাখ টাকা বহাল রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী এক লাখ টাকার জন্য কর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকার জন্য করহার ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য করহার ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ এবং বাকি পরিমাণ আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।
কোম্পানি, তহবিল ও ট্রাস্ট কর্তৃক অর্জিত মূলধনি আয়ের ওপরও ১৫ শতাংশ কর আরোপের বিধান করা হয়েছে। এর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে কেবল ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই বিধান রাখা হয়েছিল।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় পেনশন বাবদ যে কোনো আয় এবং পেনশন স্কিমে প্রদত্ত যে কোনো পরিমাণ চাঁদা করের আওতামুক্ত থাকবে।
একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে পরিবেশ সারচার্জ দিতে হবে, কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে না বলে অর্থবিলে সংশোধন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫০০ সিসি/৭৫ কিলোওয়াট থেকে ৩৫০০ সিসি/১৭৫ কিলোওয়াটের গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবেশ চার্জ ২৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে।
আগের করবর্ষের তুলনায় অন্তত ১৫ শতাংশ অধিক আয় কেউ যদি রিটার্নে প্রদর্শন করেন, তাহলে তাকে অডিটের আওতামুক্ত রাখার বিধান করা হয়েছে।
এছাড়াও সিটি করপোরেশনে অবস্থিত কোনো কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ভাড়া নিলে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সব স্থানের কমিউনিটি সেন্টার বা কনভেনশন হল ভাড়ার ক্ষেত্রে এ প্রস্তাব করা হয়েছিল।
গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার শিরোনামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। এতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।