প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা তাদের ধরব।
আজ (শনিবার) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। সে যেই হোক না কেন দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।
বাংলাদেশ কখনো পিছিয়ে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ পিছিয়ে যাবে না। যে যত চেষ্টা করুক দেশকে ধ্বংস করতে পারবে না। এই স্বপ্নযাত্রার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে এ দেশের মানুষ।
বাংলাদেশের জনগণ কর্মঠ, সৃজনশীল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু মাঝখানে দুষ্টু প্রকৃতির থাকে। ওগুলোকে ধর্তব্যে নিই না।
বিরোধী দলীয় নেতা কালো টাকা সাদা করেছেন কি না দেখতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ঢাকায় যার এক কাঠা জমি আছে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এইভাবে অনেক সময় কিছু করতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারে না, আয়কর দিতে পারে না। আয়কর দিয়ে যাতে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে.. এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না করে সে জন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিল, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই নিয়েছিল। তারা কিন্তু ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮ বা পরবর্তীতে সুযোগ নিয়ে টাকা সাদা করেছিল। জেনারেল এরশাদ সাহেবও মনে হয় করেছে। খোঁজ নিতে হবে। তিনি না করলেও কেউ না কেউ করেছে। আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা করেছেন কি না সেটা দেখতে হবে।
বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, টেন্ডারের শুভঙ্করের ফাঁকির কথা উনি বলেছেন। টেন্ডার না দিয়ে কাজ দেওয়া। উনি তো মন্ত্রী ছিলেন, টেন্ডার না দিয়ে কাজ করে, কাজের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করার বিষয় মনে হয় উনি নিজেই রপ্ত করেছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের সুচিন্তিত কৌশল এবং গণমানুষের শক্তিকে যুগপথ ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব। এই বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের হাব হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, সরকার দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে বলেই অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশ নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবো। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে আজকে বিদ্যুতটা আসতো কোথা থেকে? আমরা ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ যাতে পরিবেশবান্ধব হয় আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। নেপাল ও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বানানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এখন এয়ার কন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা... এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের এলাকায় দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করবো।
জ্বালানি তেল মজুদ রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে একশো কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই ভর্তিুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেবো? বেশি বেশি এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ, লিফট চলার জন্য দেবো? তাতো দেবো না। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যেটা করার দরকার সেটা করবো। যে যত বেশি ব্যবহার করবে তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা এলএনজিতে ভর্তুকি দিই। ভবিষ্যতে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে না।
সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সমালোচকদের সমালোচনা করে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরতে চাই। কারণ এতক্ষণ শুনলাম কিছুই করি নাই। একটা গোষ্ঠী আছেই, কিছু ভালো লাগে না। তাদের জানার জন্য বলা দরকার।
তিনি বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন তারা সব কিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণ খেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অঙ্ক বলে, কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে তা খুবই দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেশীসহ সকল দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সফলভাবে এ নীতি মেনে চলছি। হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়। সেই নীতি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ, সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসাবে। কোনো ক্ষেত্রে যেন আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সমৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন করে গড়ে তুলছি।