প্রভাত রিপোর্ট : সংখ্যাগতভাবে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবেই। কিন্তু সেই হারে রপ্তানি আয় বাড়েনি। চাহিদা অনুযায়ি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে না পারলে এ খাতে আয় ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে। কর্মরত অদক্ষ শ্রমিকদের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। মালয়েশিয়া,মালদ্বীপ, ওমান স্বল্পদক্ষ,অদক্ষ কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরির উপর তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো এবং বায়রা সূত্রে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পোল্যান্ড,রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া,হাঙ্গেরি,পর্তুগাল কৃষি,মৎস্য আহরণ,নির্মাণ ড্রাইভার,রাজমিস্ত্রি,ওয়েল্ডারসহ বিভিন্ন পদে লোক নিবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুবাই ট্যাক্সি কর্পোরেশন আগামী ৪ বছরে প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার ট্যাক্সি ও মোটর সাইকেল চালক নেবে। চলতি বছর তারা নেবে ২ হাজার ট্যাক্সি ও মোটর সাইকেল চালক। এরইমধ্যে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিএমটির কাছে। বায়রা এ ব্যাপারে উদ্যোগী পালন করছে বলে জানা যায়। আরো জানা গেছে,সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড সংখ্যক ১১ লাখ ৯৬ হাজার জনশক্তি রপ্তানী করেছে। পূর্ববর্তী বছরে এ সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৭ হাজার।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের কারণেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়াসহ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারকে সিন্ডিকেটের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের রাহুমুক্ত করে বন্ধ শ্রমবাজারগুলো খুলতে না পারলে জনশক্তি রপ্তানি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী ১২ তারিখে মালয়েশিয়ার সাথে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশ যাতে সব বৈধ এজেন্সির জন্য কর্মী পাঠানোর দাবি জানায়, সে আহ্বান আমরা ইতোমধ্যে রেখেছি। ২০২২ সালের আগস্টে শ্রমবাজার পুনরায় খোলার পর বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখের বেশি শ্রমিক নিতে চেয়েছিল মালিয়েশিয়া; যদিও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ৪.৯৪ লাখ শ্রমিক সেদেশে গেছেন।
নির্ধারিত সময় ৩১ মে'র আগে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো টিকিটের ব্যবস্থা করতে না পারায় প্রায় ১৭,০০০ কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেন নি। এই প্রেক্ষাপটে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তদন্ত করে দায়ী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
গত অর্থবছরে সৌদি আরবের পরে বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিয়েছে মালয়েশিয়া। মূলত উৎপাদন, নির্মাণ এবং পরিষেবা খাতে এসব কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে, উভয় দেশ থেকেই শ্রমিকদের অভিযোগ— বাংলাদেশ ছাড়ার আগে যে চাকরির প্রতিশ্রুতি তাদের দেওয়া হয়েছিল, তা সেদেশে গিয়ে পাননি তারা।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য সৌদি আরবে গত অর্থবছরে ৫ লাখ ২৫ হাজার কর্মী নিয়োগ পেয়েছে।
তবে জুনে এই সৌদিতে কর্মী নিয়োগের সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ হাজারে। কারণ হলো— রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া সৌদি আরব যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দুই সপ্তাহ ইস্যু করেনি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে তাদের প্রতিশ্রুত চাকরি থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যদিও বায়রার মতে, এসব পদক্ষেপ সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, যদিও বিএমইটি নিয়ম শিথিল করেছে, তবে এখন ক্লিয়ারেন্স কার্ড (বহির্গমন ছাড়পত্র) ইস্যু করার আগে চাহিদাপত্র এবং চাকরি চুক্তিপত্র দেখাতে হবে।
বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে আরেকটি বিপত্তি হলো কর্মীদের স্বল্পদক্ষতা। সৌদি আরব মূলত নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং গৃহকর্মী নিয়োগ করে থাকে। এছাড়া রাজমিস্ত্রি, ছুতার, ওয়েল্ডার, প্লাম্বার এবং ড্রাইভারের মতো আধা-দক্ষ পদেও চাহিদা রয়েছে।
এদিকে, গেলো বছর বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত; এরপরে রয়েছে— কাতার, সিঙ্গাপুর, ওমান এবং কুয়েত।
বাংলাদেশি নিয়োগকারীদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের এই গন্তব্যগুলো সম্প্রতি স্বল্পদক্ষ কর্মী নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে যা দেশের বিদেশি কর্মসংস্থানের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক।
ওমান সম্প্রতি দক্ষ শ্রমিকদের জন্য ভিসা স্থগিতাদেশ শিথিল করেছে; তবে স্বল্পদক্ষ কর্মীদের বিষয়টি এখনও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। গত সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছিল।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, পর পর তিন বছর আমরা প্রায় ১০ লাখের উপরে কর্মী পাঠাচ্ছি ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারে দিকে আরও নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, পর্তুগালের মতো দেশগুলো কিছু কিছু লোক নিচ্ছে। তারা যেহেতু দক্ষ কর্মী চায়, সেজন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী তৈরি করে পাঠাতে হবে।