প্রভাত রিপোর্ট : ২০২৬ সালে ষষ্ঠ হতে নবম শ্রেণির পরীক্ষার মূল্যায়ন হবে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। দশম শ্রেণি শেষে পাবলিক পরীক্ষাও (এসএসসি ও সমমান) হবে প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এব্যবস্থা কার্যকর করবে সাধারন, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোড। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। এই পরীক্ষার মূল্যান হবে নতুন এই পদ্ধতিতে। অবশ্য জিপিএ গ্রেডিং পদ্ধতি আর নারাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষামন্ত্রী এতে একমত নয়। তিনি এসএসসিতে গ্রেডিং রাখার পক্ষে। এদিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি) নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন কাঠামো চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। এতে গ্রেডিং বা নম্বর দেয়ার সুযোগ নেই তবে শিক্ষামন্ত্রী মূল্যায়ন পদ্ধতি চুড়ান্ত করতে এনসিসিসির বৈঠকে এ কাঠামো যাচাই করে দেখতে বলেছেন। ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় অন্তত প্রথমবারের পরীক্ষায় গ্রেডিং পদ্ধতি বহাল রাখার মত দিয়েছে বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) স্থায়ী সদস্য। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে একটা আলাপ হয়েছে। সেটা হলো- শিক্ষার্থীরা যে ফলাফলটা পাবে, সেটাতে ইনডিকেটর বা চিহ্নভিত্তিক ফল যাই বলি না কেন, সেটা দিলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় বা অস্পষ্টতা রয়েছে। কাজেই শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, চিহ্নভিত্তিক না করে আমরা আগের মতো গ্রেডিং রাখতে পারি। এটা এসএসসি, দাখিল কিংবা ভোকেশনাল সব ক্ষেত্রে।
তাহলে ২০২৬ সালে নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি হলেও গ্রেডিং পদ্ধতি বহাল থাকছে কি না, জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহ আলমগীর বলেন, শিক্ষামন্ত্রী গ্রেডিং রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা কীভাবে রাখা যাবে, তা এনসিটিবি নির্ধারণ করবে। তবে এটা যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে, তাও বলা যাচ্ছে না। আগস্টে এনসিসিসির আরেকটি বৈঠক হবে, সেখানে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হয়তো নতুন শিক্ষাক্রমে কীভাবে গ্রেডিং রেখে এসএসসির ফল প্রকাশ করা যায়, সেটা নিয়ে এনসিটিবি কাঠামো উপস্থাপন করবে। তখন সেটা আলোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।
এনসিসিসি সভায় অংশ নেওয়া ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারও বলেন, শিক্ষামন্ত্রী গ্রেডিং রাখার কথা বলেছেন। এটা কীভাবে হবে, তা হয়তো সামনে আরও স্পষ্টভাবে জানা যাবে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, হ্যাঁ, এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে হুট করে এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিংবা কথা বলা সম্ভব নয়। যে বিষয়গুলোর সংশোধনী আজকের বৈঠক থেকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে এনসিটিবি কাজ করবে। আগস্টের এনসিসিসি সভায় এটা চূড়ান্ত হতে পারে।
নতুন শিক্ষাক্রমে যে মূল্যায়ন পদ্ধতি এনসিসিসির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তাতে মূল্যায়ন হবে সাতটি পর্যায়ে। সেগুলো হচ্ছে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। সবচেয়ে যে ভালো করবে সে ‘অনন্য’ পাবে। এভাবে অন্য পর্যায় দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।
শিখনকালীন অর্থাৎ শ্রেণি কার্যক্রমের ওপর ৩৫ শতাংশ মূল্যায়ন করা হবে। বছর শেষে হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। সেখানে পরীক্ষা নেওয়া হবে, যার ওয়েটেজ হবে ৬৫ শতাংশ। শ্রেণি কার্যক্রম বলতে অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপনা, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যা সমাধান ও পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করবে শিক্ষার্থীরা। আর বছর শেষে পাঁচ ঘণ্টার (বিরতিসহ) মূল্যায়নে অংশ নেবে শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ব্যক্তিগত, দলভিত্তিক বিভিন্ন কাজে অংশ নেবে। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে শ্রেণি কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে।
এনসিসিসির সভায় অনুমোদিত মূল্যায়ন কাঠামোতে খুব বেশি পরিবর্তন বা সংশোধনী আসছে না। এনসিটিবি যে খসড়া মূল্যায়নের প্রস্তাবনা দিয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগই রাখা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলোÍএসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী দুই বিষয়ে ফেল করলেও তাকে একাদশে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। তাদের মার্কসশিটও দেওয়া হবে। পরবর্তীসময়ে ওই শিক্ষার্থীকে দুই বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়ন হবে দুই পদ্ধতিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদরাসার যে ৯টি বিষয়ের মিল রয়েছে, সেগুলোতে মূল্যায়ন করা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে। তবে বিশেষায়িত পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে আগের নিয়মে। একইভাবে কারিগরির এসএসসি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, দুই ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে মাদরাসা ও কারিগরির শিক্ষার্থীদের। আগামী দুই বছর এ প্রক্রিয়া চলবে। তারপরে অর্থাৎ, ২০২৮ সাল থেকে সব বিষয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী-২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করেছে সরকার। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এ প্রক্রিয়া চালু হবে।
২০২২ সাল থেকে নতুন এ শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে এনসিটিবি। প্রচলিত নম্বর ও গ্রেডিং পদ্ধতি বাতিল করে প্রথমে ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ দিয়ে শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়ন শুরু হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে তা থেকে সরে যায় সরকার। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গঠন করেন উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সেই কমিটির মতামতের ভিত্তিতে নতুন করে বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্যায়নের খসড়া চূড়ান্ত করে এনসিটিবি। পরে সেটি অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় ১ জুলাই মূল্যায়ন পদ্ধতির খসড়া এনসিসিসি সভায় উপস্থাপন করে। শিক্ষামন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সংশোধনীসাপেক্ষে নতুন এ মূল্যায়ন কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রভাত/টুর