বিশেষ প্রতিনিধি : বহুল প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠান শুক্রবার। সেতুর নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তারা বাংলাদেশ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে। আর সমাপনি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে গত বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসেইন খান বিস্তারিত জানিয়েছিলেন। তবে প্রতিক্ষীত পদ্মা সেতুর এই সমাপনীকে ঘিরে সারাদেশে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এই অনুষ্ঠানকে সফল করতে ইতিমধ্যে মাওয়া প্রান্তে সুধি-সমাবেশে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সুধী সমাবেশের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে বরণ করে নিবে মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে অন্য প্রান্তে চলছে শেষ মুহূর্তের মঞ্চসজ্জা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কাজ। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুতে ১৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত পদ্ম সেতু উদ্বোধন করেন। এ পর্যন্ত সেতুর উভয় প্রান্ত দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার ৯৫টি। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পারাপার হয়েছে ৫৬ লাখ ১ হাজার ২৩২ এবং জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারাপার হয়েছে ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৩টি যানবাহন। ২৬ জুন থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হওয়া পদ্মা সেতু প্রতিদিনই সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক লাইনেও বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে এই পদ্মা সেতু। বাণিজ্য, আঞ্চলিক বাণিজ্য, দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। শিল্পাঞ্চলও গড়ে উঠেছে, আশে পাশে কৃষি কাজেও সম্প্রসারণ ঘটছে এই পদ্মা সেতু হওয়ায়। পাল্টে গেছে ২১ জেলার তিন কোটি মানুষের জীবন যাপন। ২২-২৩ অর্থবছরে তো এই অঞ্চলগুলো থেকে রপ্তানি বেড়েছে যার আয় হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নে শায়িত এই পদ্মা সেতু নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। বিশ্ব ব্যাংক প্রথমে অর্থ দেয়ার কথা বলে পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকে শংকা প্রকাশ করেছিলেন আদৌ এই সেতু বাস্তবায়ন হবে কিনা।
২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট পদ্মা সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একনেক। তখন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময়ে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। দায়িত্ব পায় নিউজিল্যান্ডভিত্তিক মাউনসেল লিমিটেড।
২০১০ সালের ১১ এপ্রিল মূল সেতুর দরপত্র আহ্বান করে সরকার। পরের বছর ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি রেলপথ যুক্ত করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতু সংশোধিত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। কিন্তু ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দমে যাননি। কানাডার আদালতে এ সংক্রান্ত একটি মামলাও হয়েছে যা প্রমাণিত হয়নি। পরে ২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। যা ২০১৫ সালে সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি মুঠেছে। শুধু তাই নয়, দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকবে। যানবাহনের সংখ্যা প্রতিবছর ৭-৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ৬৭ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মা সেতু বাস ও রেল উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে শুধু যাতায়াতেরই সুবিধা হবে না বরং এটি টেলিযোগাযোগ, বিদ্যু ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।
প্রভাত/টুর