প্রভাত অর্থনীতি : সেন্ট্রাল লন্ডনের রাস্তায় চলছে মাইক্রোলিনো মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি। বৃহৎ আকারের স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেইকেল (এসইউভি)-এর তুলনায় এটি আকারে বেশ ছোট। তবুও ডিজাইনে ভিন্নতার জন্য রাস্তায় গাড়িটি যেন সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। গাড়িটি বাজারে এনেছে সুইস কোম্পানি মাইক্রো। যারা কি-না মিনি-মাইক্রো কিক স্কুটার তৈরির জন্যও বিখ্যাত। মাত্র দুই সিটের মাইক্রোলিনো গাড়িটি আড়াই মিটার লম্বা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গাড়িটিতে একটিমাত্র দরজা রয়েছে; যা কি-না সামনের দিকে অবস্থিত।চলতি মাসে যুক্তরাজ্যে মাইক্রোলিনো গাড়িটি বিক্রি শুরু হয়েছে। যদিও অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী বড় গাড়ির চাহিদা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)-এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী গাড়ি বিক্রির প্রায় অর্ধেকই এসইউভি। এক্ষেত্রে এসইউভির সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সংস্থাটি জানায়, একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক গাড়ি বিক্রির প্রবণতা বড় ও হেভি গাড়ির দিকেই ধাবিত হচ্ছে। আকারে ছোট গাড়িগুলি এখনও খুব বেশি অহরহ দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে মাইক্রোলিনো গাড়িটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বহু মানুষ থমকে দাঁড়িয়ে গাড়িটিকে দেখছে, অনেকে হাসছে। কেউবা আবার কৌতূহল নিয়ে ছবিও তুলছে। যদিও বাজারে এসইউভি'র চাহিদাই সুদূর ভবিষ্যতে বেশি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ইকোনোমিকসের প্রফেসর ডেভিড বেইলি বলেন, নানা প্রয়োজনেই বড় গাড়ির চাহিদা বাড়ছে। এরমধ্যে বড় জায়গা ও বেশি সিট অন্যতম। এছাড়া ছোট গাড়িতে এয়ারব্যাগ ও ইমিশন কন্ট্রোল সিস্টেমে খরচ বেশ বেড়ে যায়। বেইলি বলেন, ছোট গাড়ি তৈরির চাইতে ফার্মগুলো বড় গাড়ি তৈরিতেই বেশি মনোযোগী হতে চায়। কেননা এতে লাভ বেশি। তবে বেশি পরিমাণে ছোট গাড়ি বিক্রি করা গেলেও ভালো লাভ করা সম্ভব। ঠিক তেমনি একটি গাড়ির মডেল মিনি; যেটি ব্রিটেনে বেশ সুপরিচিত। ৩.০৫ মিটারের গাড়িটি যুদ্ধোত্তর সময়ে জ্বালানি রেশনিংকে কাজে লাগিয়ে বাজারে নিয়ে আসা হয়েছিল। ২০১১ সালে এটিট নতুন সংস্করণ আনা হয়, যা আকারে ৩.৭ মিটার। আরও বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডও ছোট গাড়ি নির্মাণের দিকে ঝুঁকেছে। স্মার্ট ফোর্টও যার মধ্যে অন্যতম। আকারে ছোট এই গাড়িটি ইউরোপের রাস্তায় বেশ জনপ্রিয়। যদিও বর্তমানে এর নতুন বৈদ্যুতিক মডেলটি পাঁচ সিটের বড় গাড়ি। বড় গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্য ভালো নয়। কেননা ওজনে ২০০ কেজি বা তার বেশি এবং সামনে বড় জায়গা থাকা গাড়িগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানি বেশি খরচ করতে হয়। আইইএ-এর হিসাব মতে, এটি কার্বন নির্গমনকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
গত বছর তেলের চাহিদা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির এক চতুর্থাংশের পেছনে এসইউভি-কে দায়ী করা হয়। অন্যদিকে এগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে ছোট যানবাহনের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান খনিজ যেমন লিথিয়াম, নিকেল ও কোবাল্ট ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও বড় গাড়িগুলো টায়ার দূষণ বাড়ায়। একইসাথে এতে দুর্ঘটনায় পথচারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেশি। এসইউভি গাড়িগুলো আয়তনে বড় হয়ে থাকে। ফলে সেগুলো রাস্তায় ও পার্কিংয়ে বেশি জায়গা দখল করে।
দ্য এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থিংক ট্যাংকের হেড অব ট্রান্সপোর্ট কলিন ওয়াকার বলেন, আমি আশা করছি যে, রেনল্ট ৫ ও ডাসিয়া স্প্রিং-এর মতো ছোট ও দামে সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক মডেলগুলি জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যয় থেকে সরে আসতে সাহায্য করবে।
ওয়াকার বলেন, মানুষ ছোট ও কম দামের বৈদ্যুতিক গাড়ির অভাবে এগুলো ব্যবহারে অভ্যস্ততা তৈরি করতে পারেনি। এক্ষেত্রে আমার মতে মডেলগুলি তৈরির চেষ্টায় উৎপাদকদের একটু ধীরগতি ছিল। এদিকে চীন ক্রমবর্ধমান বৈদ্যুতিক গাড়ির সাথে ছোট গাড়ির সংযোগ ঘটাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রায়শই দেশটি সস্তা লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি ব্যবহার করছে। ফলে মাত্র ৬ থেকে ৯ হাজার ডলারের মধ্যে বেশ আকর্ষণীয় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে।
তবে ছোট গাড়ির বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। সাইকের এমজি৪ ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের বাজারে ভালো স্থান দখল করেছে। এদিকে বিআইডি-এর ডলফিন মডেলের গাড়ি নিউক্লিয়ার পরিবারের কাছে বেশ পছন্দনীয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাইক্রোলিনো প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে থাকা মেরলিন আউটবোটার আশা করেন যে, গাড়িটি ইউরোপের ছোট গাড়ির বাজারে বেশ ভালো করবে। যদিও ২২ হাজার পাউন্ডের এই গাড়িটি কেনার সক্ষমতা খুব বেশি মানুষের নেই।
এদিকে ব্রাসেলস-ভিত্তিক ক্যাম্পেইন গ্রুপ ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের জেমস নিক্স মনে করেন, অন্যান্য দেশের উচিত ফ্রান্সকে অনুকরণ করা। কেননা দেশটি প্যারিসে বড় গাড়ির জন্য উচ্চ পার্কিং ফি এবং জাতীয়ভাবে উচ্চ কর আরোপ করে থাকে।
প্রভাত/টুর