প্রভাত সংবাদদাতা, গোপালপুর : মাছ ধরতে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের খাল,বিল নদীতে চায়না জাল ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে,অবাধ চায়না জালের ব্যবহারে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ। ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ, বিলীন হচ্ছে দেশি প্রজাতির ছোট-বড় মাছ, শামুক, ঝিনুক, কুঁচিয়া,কাকড়া সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নাম মাত্র অভিযান চালিয়ে জব্দ করা চায়না জাল আগুনে পুড়িয়ে দায় সারছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। জানা গেছে, উপজেলার সকল খাল, বিল, বৈরান ও ঝিনাই নদীতে প্রভাবশালীরা চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরেন। এই সূক্ষ্ম জালে ঝিনুক, কাঁকড়া, ব্যাঙ, কুঁচিয়া, শামুক ও বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদও ধরা পড়ে। আর জাল থেকে মাছ বাছাই করতে গিয়ে এসব জলজ প্রাণী মারা যায়।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাইন্দা গ্রামের গৃহিণী মাজেদা বেগম জানান, তিনি বাড়ির পাশে কুকরী বিলে সারা বছর হাঁস পালন করেন। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনি ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালান। সারা বছর এ বিল থেকে হাঁসের খাবার শামুক সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত দুই বছর চায়না জালের জন্য কুকরীসহ আশপাশের বিলে শামুক পাওয়া যায় না। গ্রামের আরও ২০/২৫টি পরিবার, যারা বিলে হাঁস পালন করে বাড়তি আয় করে, তারাও হাঁসের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
বিখ্যাত বংশীবাদক ও উদ্যোক্তা শেখ সোলায়মান বলেন, শুঁটকি মাছ অনলাইনে ভালোই বেচাবিক্রি শুরু করেছিলাম। যে বছর শুরু করছি সেই বছর ভালো মাছ হইছিল বিলে। সবাই শুঁটকি করছে আমিও অনেক বিক্রি করছি । কিন্তু এখন চায়না জাল সেই মাছ আর বিলে হতে দেয় না। তাই আমরা শুঁটকি মাছ তেমন পাই না, তাজা মাছ পেতেই এখন অনেক কষ্ট।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিখিল বর্মণ জানান, স্থানীয় খাল-বিলে কুঁচিয়া ধরে বাজারে বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। কিন্তু এবার গোপালপুর উপজেলার প্রায় খাল-বিলে কুঁচিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্ষাকালে চায়না জালে নির্বিচারে শিকার করা হয় মা মাছ। এতে মাছ ও পোনার সঙ্গে ধরা পড়ে ছোট-বড় কুঁচিয়া। জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেওয়ার সময় কুঁচিয়া ও এর পোনা মেরে ফেলা হয়।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ ভট্টাচার্য বলেন, চায়না জালের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে, কয়েক শ নিষিদ্ধ চায়না জাল পুড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযোগ পেলেই যেকোনো এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।