প্রভাত সংবাদদাতা, রামপা : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকের বেড় ইউনিয়নের বাসিন্দা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শুভ। পাঁচ বছর আগে শখের বসে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় ৪টি ইউরোপিয়ান সিল্কি মুরগি কিনে একটি ঘরে পালতে থাকেন। প্রথমে খাপ খাওয়াতে কষ্ট হলেও পরবর্তী সময়ে শখের মুরগি পালন থেকেই আয়ের উৎস খুঁজে পান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়তে থাকায় গড়ে তুলেছেন শুভ অ্যাগ্রো নামের বিদেশি মুরগির ফার্ম। এখান থেকে তার প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় হয়। খামারে এমন মুরগিও আছে, যার এক জোড়ার দাম পড়ে ৭০ হাজার টাকা।
ইউরোপিয়ান সিল্কি জাতের পাশাপাশি তার খামারে রয়েছে ইউরোপিয়ান ব্রাহমা, হামবার্গ, সিলভার, কসোমা, ফাইটার, রিংনেকস, বাফ পলিশ ক্যাপ ফ্রিজেল, হোয়াইট পলিশ ক্যাপ, ব্যান্থাম, উইনডট, সেব্রাইটসহ ২৫ প্রজাতির প্রায় ৩০০ বিদেশি মুরগি। এ ছাড়া তিনি স্থাপন করেছেন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো ইনকিউবেটর মেশিন।
উদ্যোক্তা শুভ বলেন, ২০১৯ সালে ইউটিউব দেখে শখের বশে বাবার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে চারটি ইউরোপিয়ান সিল্কি মুরগি কিনি। মুরগিগুলো ডিম দিতে শুরু করলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর প্রায় ২৫ ধরনের বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করি। এর মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে মুরগির বাচ্চা বিক্রি শুরু হয়। পরিবার থেকে সহযোগিতা না পেলে এই কাজে সফল হতে পারতাম না। তিনি আরও বলেন, খামারে মুরগি থেকে বছরে আমার আয় হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা। এই খামারে সবচেয়ে দামি মুরগি উইনডট স্প্ল্যাশ। এর এক জোড়া বাচ্চার দাম ৪ থেকে ৫ হাজার এবং বড় এক জোড়া মুরগির দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে সবচেয়ে ছোট জাতের ‘কিং কোয়েল’ নামের পাখি, যার উৎপত্তিস্থল এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। এর এক জোড়ার দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। ছোট বাচ্চার জোড়া বিক্রি করি ১২শ থেকে ১৫শ টাকা। বিদেশি মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন করে বিক্রি করি। এসব মুরগির এক থেকে ১০ দিন বয়সী বাচ্চা প্রতি জোড়া ১ হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায় হোম ডেলিভারি দেই। পূর্ণবয়স্ক মুরগির জোড়া ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু। এখন পর্যন্ত বাগেরহাট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের ৫৫ জেলায় সৌখিন বিদেশি জাতের মুরগি বিক্রি করেছি। মুরগিগুলো দেখতে সুন্দর। প্রতিদিনই অনেক মানুষ আমার খামার দেখতে আসে। এলাকার অনেক বেকার যুবক আমার দেখাদেখি গড়ে তুলেছেন বিদেশি মুরগির ফার্ম।
খামার দেখতে আসা সৈকত শেখ বলেন, আগে ইউটিউবে দেখছি এই মুরগি। সামনাসামনি দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
আরেক দর্শনার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, আমি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে বিদেশি মুরগির খামার শুরু করতে চাই। এজন্য শুভ ভাইয়ের খামার দেখতে এসেছি। অনেক প্রজাতির বিদেশি মুরগি দেখলাম। অনেক ভালো লেগেছে।
শুভ'র বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেছিল। এখন এই ফার্ম থেকে বছরে শুভর আয় হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। তার দেখাদেখি অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক বেকার যুবক গড়ে তুলেছেন বিদেশি মুরগির ফার্ম।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছাহেব আলী বলেন, ফয়সাল আহমেদ শুভর বিদেশি মুরগির খামারের কথা শুনেছি। সেখানে বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৫ প্রজাতির বিদেশি মোরগ-মুরগি আছে। তার খামারের প্রতি জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সুদৃষ্টি রয়েছে। এমন তরুণ উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে করা হবে।