প্রভাত রিপোর্ট : সরকার ও শিক্ষার্থীদের অবিচল অবস্থানে জিম্মি সাধারণ মানুষ। রাজধানীসহ দেশ জুড়ে চলছে অস্থিরতা। সাধারণ মানুষ চরম বিরক্ত এই আন্দোলনে। বিশেষ করে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে সড়ক অবরোধ করার ফলে এর প্রভাব সরাসরি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ওপর পরছে। সড়ক াবরোধের অজুহাত দেখিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যানবাহনের ভাড়াও বাড়ানো হচ্ছে ইচ্ছে মাফিক। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ব্যস্ততম এ সড়কটি দীর্ঘ এক ঘণ্টা অবরোধের ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
সোমবার বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁতিবাজার এলাকায় পুলিশের বাধা অতিক্রম করে গুলিস্তানে দিকে চলে আসেন আন্দোলনকারীরা। পরে বংশালে ফের পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলকারীরা জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন।
শফিকুল নামে এক পথচারী বলেন, ঢাকার যানজটে এমনিতেই আমরা অতিষ্ঠ। এর মধ্যে আবার সড়ক অবরোধ করে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে বলব অতি দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের একটু স্বস্তি দেন।
রফিকুল ইসলাম নামে এক পথচারী বলেন, ব্যবসায়িক কাজে চিটাগাং রোড থেকে কারওয়ান বাজার যাচ্ছিলাম। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। ওইদিক দিয়ে আবার শাহবাগ মোড়ও ব্লক। বাধ্য হয়ে এখন চিটাগাং রোডে ফিরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার গাড়িও পাচ্ছি না।
সচিবালয়ের অপর এক কর্মচারী জায়েদা বেগম বলেন, অফিস থেকে বের হয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চাঁনখারপুল যাওয়ার কোনো বাস পেলাম না। অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের জিপিও মোড় ছেড়ে যাওয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে হেঁটেই রওয়ানা হচ্ছি।
সাধারণ মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে আন্দোলনের অন্যতম এক সমন্বয়কারী শাহীন বলেন, এ আন্দোলন শুধু আমাদের জন্য না। এ আন্দোলন সমগ্র দেশের মানুষের জন্য। পুলিশ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, রিকশাচালক সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি সরকার মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসার ব্যবস্থা করবেন।
এদিকে কোটা বাতিলের এক দফা দাবিতে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে নীলক্ষেত থেকে মিছিল নিয়ে এসে সড়কে অবস্থান নেন তারা। ফলে প্রায় একঘণ্টা ধরে বন্ধ হয়ে যায় মিরপুর সড়ক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষজন। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখা গেছে লোকজনকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে পুরো নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাবসহ আশপাশের এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব অভিমুখের সড়ক, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব অভিমুখের সড়ক, ধানমন্ডি এবং মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্সল্যাব অভিমুখের সব সড়কেই তৈরি হয় তীব্র যানজট। এই সবগুলো সড়কেই আটকে থাকা যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
কাইয়ুম আহমেদ নামের এক পথচারী বলেন, সাভারের উদ্দেশ্যে গুলিস্তান থেকে ডি-লিংক পরিবহনের বাসে উঠেছিলাম। কিন্তু এখানে আসতেই অবরোধের মুখে পড়তে হলো। এখন বাস থেকে বস্তা নিয়ে কিছুটা সামনে এগোনোর চেষ্টা করছি। অবরোধ ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করলে রাত পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। সেজন্য পায়ে হেঁটে কিছুদূর আগানোর চেষ্টা করছি।
জুনায়েদ আহসান নামের আরেক পথচারী বলেন, গতকালও এই একই অবস্থা হয়েছে। অফিস থেকে ঘরে ফেরার সময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এর আসলে একটি সমাধান করা উচিত। প্রতিদিন এমন অবস্থা হলে কর্মজীবী শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি হয়। সেজন্য বিষয়টি নিয়ে সমাধানের পথে হাঁটা উচিত।
অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের তত্ত্বাবধানে মিরপুর সড়কে আটকে থাকা গাড়ি ঘুরিয়ে নীলক্ষেত পাঠাতে দেখা গেছে। তবে শাহবাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কও বন্ধ থাকায় ডাইভারশন দেয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।