প্রভাত রিপোর্ট :আলোচিত পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে একজন লক্ষ্মীপুরের রামগতির নোমান সিদ্দিকী। তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার দ্বিতীয় আসামি। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে স্ত্রী সাফিয়া সুলতানা স্বর্ণার যোগসাজশে নোমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে তার সম্পর্কও তেমন ভালো নয়। নোমান রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চর মেহের গ্রামের মৃত আবু তাহের মিয়ার ছোট ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোমান রামগতির চর মেহের আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯৮ সালে সেনা বাহিনীতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯ বছর সেই চাকরি করে তিনি অবসর নেন। চাকরি জীবনে তিনি জাতিসংঘের অধীনে লাইবেরিয়াতে শান্তি মিশনে দায়িত্বপালন করেন। ২০০৭ সালে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিদ্যুৎ কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের মেয়ে সাফিয়া সুলতানা স্বর্নাকে তিনি বিয়ে করেন। স্বর্না ঢাকার মিরপুরে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি একজন গৃহিণী। স্বর্ণা সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর আত্মীয় বলে জানা গেছে।
চরআলগী ইউনিয়নের রামদয়াল বাজার নোমানের বড় ভাই ওমর ফারুকের ওষুধের দোকান রয়েছে। আর তার মেঝ ভাই মো. সালাহ উদ্দিন সেনাবাহিনীতে ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।
নোমানের বিষয়ে তার ভাই ওমর ফারুক ও ভগ্নিপতির মেজবাহ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে নোমান বাড়িতে কম আসে। তার বাবা আবু তাহের মারা যাওয়ার পর থেকে আসতো না বললেই চলে। যদিও আসতো পরিবারের অন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ বা কথা বলতো না। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। গ্রামে বাবার সম্পত্তি ছাড়া তার ব্যক্তিগত কোনো কিছু নেই। তিনি কোনো সম্পদ অর্জন করে থাকে তা ঢাকায় ও তার স্ত্রীর এলাকায় হতে পারে। এর মধ্যে তার স্ত্রীর নামে সবচেয়ে বেশি সম্পদ হতে পারে। কারণ স্ত্রীর কথার বাইরে তিনি কোন কাজ করেন না। শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরির সুবাদে স্ত্রীর যোগসাজশে নোমান প্রশ্নপত্রের সঙ্গে জড়িত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফারুক বলেন, সেনাবাহিনীতে চাকরি করাকালীন নোমানের কোনো অর্থ সম্পদও ছিল না। অবসরে যাওয়ার পর থেকেই সে অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন। এজন্য তার বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকায় নোমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নোমানের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী সাহাব উদ্দিন, আফতাব উদ্দিন ও জয়নাল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নোমানের বাবা আবু তাহের কৃষক ছিলেন। বাড়িতে তার বাবার করা একটি সেমিপাকা ঘর ও একটি টিনের ঘর রয়েছে। সেমিপাকা ঘরটিতেই তিন ভাই বসবাস করে। বাড়ির পশ্চিমে মেঘনা নদী। তবে গ্রামের নোমানের ব্যক্তিগত সম্পত্তির আছে বলে জানা নেই কারো।
চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরি বলেন, নোমান এলাকায় খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করতো। তার অঢেল সম্পত্তি ও জাল জালিয়াতির বিষয়ে এলাকার কেউই কিছু জানে না। কারণ এলাকায় তার কোন সম্পদ নেই, শুধু একটি মাছ চাষের পুকুর ছাড়া। ভাই-বোন ও ভগ্নিপতির সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো না।
প্রসঙ্গত, পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকা আবেদ আলী ও নোমানসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আবেদের কাছ থেকে নোমান প্রশ্নপত্র নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদেরকে দিতেন।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার নোমান সিদ্দিকীর একাধিক গাড়ি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া নোমান তার চারটি ব্যাংক হিসাবে থাকা অর্থসহ অন্তত ৫০ কোটি টাকার মালিক বলে ওই কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গত শুক্রবার নোমান সিদ্দিকীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
প্রভাত/টুর