প্রভাত প্রতিবেদক : জেলায় এবার ৬৪ হাজার ৮৩১ টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। যার বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মূল্য ৪৮৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। পাটের বাজর দর ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আশাবাদি কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় চলতি ২০২৩-২৪ খরিপ-১ মৌসুমে পাট আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমিতে। ফলন অনুযায়ী ৬৪ হাজার ৮৩১ টন ফলন পাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। বর্তমান বাজার অনুযায়ী (প্রতি মণ ৩২০০-৩৬০০ টাকা) ৪৮৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন কৃষক। আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে দেশী, তোষা, মেসতা ও কেনাফ জাতের পাট। আবাদকৃত পাটের মধ্যে সবচাইতে বেশি (৭২ শতাংশ) আবাদ হয়েছে তোষা জাতের। জেলার জাজিরা উপজেলায় সবচাইতে বেশি ৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর পর পর্যায়ক্রমে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৪০১, গোসাইরহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৯০৯, নড়িয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৭১০, ভেদরগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ১৩০ ও ডামুড্যা উপজেলায় ১ হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলার রাজ নগর ইউনিয়নের মাদবরকান্দি গ্রামের পাট চাষি আলাউদ্দিন মাদবর বলেন, পাট আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হবে। প্রচন্ড খরার কারনে জমিতে পাটের বীজ বোনার পর তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সেচের ব্যবস্থা করে আবার বীজ বোনায় খরচ একটু বেশি হয়েছে। আবার অতি খড়ার কারনে ফলনও কম হবে। আগে গত মৌসুমে যেখানে বিঘায় ৮—১০ মণ ফলন পেয়েছি, এবার সেখানে বিঘায় কিছু-কিছু জমিতে ফলন দেড় থেকে দুই মণ কম হবে। গতবছর আমি ৩ বিঘা জমিতে পাট আবাদ কলে লাভবান হওয়ায় এবার ৮ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। তবে গতবারের চেয়ে দাম বেশি থাকায় ফলন একটু কম হলেও টাকায় পুষিয়ে যাবে। তবে ভরা মৌসুমের সময় সিন্ডিকেট করে ফড়িয়ারা যাতে পাটের দাম না কমিয়ে দেয় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার নজরদারি আশা করছি। জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক কামাল মাদবর বলেন, গত দুইবছর থেকে আমি নিজেদের উৎপাদিত রবি—১ জাতের লাল পাট আবাদ করছি। এ জাতের পাটের খড়া ও পানি সহিষ্ণুতা একটু বেশি হওয়ায় খড়াও ফলন কমবে না। ৫ বিঘাতে আমি ৪৫—৪৮ মণ ফলন পাব বলে আশা করছি
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের কৃষক মামুণ খান বলেন, এবার আমার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। খরার কারনে আমাকে একটু সেচ বেশি দিতে হয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে বাজার দর ভালো থাকায় আমার পুষিয়ে যাবে। আমার ৬ বিঘা জমি থেকে ৪৮-৫৩ মণ পর্যন্ত ফলন পাবো বলে আশা করছি। বর্তমানে প্রতি মণ পাট পাইকাররা ৩ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় কিনছেন। যদি ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট করে দাম না কমায় তাহলে আমি বেশ লাভবান হবো।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুহুল আমিন বলেন, পাট উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা কৃষকদেরকে প্রণোদনা, কারিগরি সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করে আসছি। আমরা পাটের সঙ্গে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে উচ্চফলনশীল জাতের আমন ধান আবাদে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার ফলে কৃষকরাও বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ধান পাচ্ছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমে আসছে। আর কৃষকরাও আগের চেয়ে কিছুটা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, কৃষি নির্ভর শরীয়তপুর জেলার কৃষকদেরকে অধিক লাভবান করতে মাটির উপযোগিতা অনুযায়ী ফসল আবাদে প্রণোদনা, মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছি। ফলশ্রুতিতে জমির উপযোগিতা অনুযায়ী কষকরা যে কোন ফসলের সঙ্গে সাথী ও অতিরিক্ত ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এবার অতি খরার কারণে পাট আবাদ ও ফলন কিছুটা কম হলেও ভালো দামের কারনে শেষ পর্যন্ত কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী। জেলার কৃষকগণ পাট কর্তন শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ কর্তন হয়েছে।
প্রভাত/এআর