বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

এখনো আঁতকে ওঠেন রামপুরাবাসী

প্রকাশিত - ২৭ জুলাই, ২০২৪   ১০:২৯ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রামপুরা-বাড্ডা-মালিবাগ এলাকা। গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই কোটা আন্দোলন চলাকালে দুর্বৃত্তদের নারকীয় তা-বের শিকার হয়েছিল বিটিভি ভবন, ওয়াসার পাম্প হাউজ, রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন পুলিশ বক্সসহ বেশ কয়েকটি ভবন। এ ছাড়া রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। ভাঙচুর ও আগুনে পুড়েছে সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য গাড়ি। আন্দোলনকারীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউনে’র সুযোগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে রীতিমতো তা-ব চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়ার পাশাপাশি চালিয়েছে লুটপাটও। শুধু তাই নয়, আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকে আসতে দেওয়া হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি পুড়ে গেছে, যার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিটিভির সম্প্রচার। তবে ভবনের ভেতরে আটকা পড়া কর্মচারী-কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা পুলিশ ও বিজিবির সহযোগিতায় দীর্ঘক্ষণ পরে নিরাপদে বের হয়ে আসেন।
আন্দোলনের ওই তিনদিনে রামপুরা-বাড্ডা-মালিবাগ এলাকার মূল সড়ক ও গলির মুখে দুর্বৃত্তরা গাছ, বিদ্যুতের পিলার ও ডিভাইডার ফেলে সাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তারা রাস্তায় স্থাপন করা সব সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে নিয়ে যায়। রাস্তায় থাকা লোহার ডিভাইডারও ভেঙে নিয়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয় রাস্তার আশপাশের দোকানও। এমনকি ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের পরের দিন শনিবারও রামপুরা এলাকায় সহিংসতা হয়।
কয়েকদিন ধরে চলমান কারফিউতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় কোটা আন্দোলনের সময় চলা তা-বের চিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে নতুন বাজার এলাকা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশের বেশ কয়েকটি দোকানও ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, কোটা আন্দোলন চলাকালে এক শ্রেণির উঠতি বয়সের তরুণরা ভাঙচুর চালিয়ে, যারা আসলে শিক্ষার্থী নয়।
রামপুরা-বাড্ডা-মালিবাগ এলাকার সহিংসতার ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ও দোকানিরা এখনো আতঙ্কিত। যে কারণে কারফিউ শিথিলের সময়ও প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকে।
আলাপকালে আতঙ্কের কথা জানান রামপুরার হাজিপাড়ার মুদি দোকানি মাহাবুব হোসেন। তিনি বলেন, দেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র একটি গোষ্ঠী ব্যাপক সহিংসতা ঘটিয়েছে। আমাদের এলাকায় অনেক বহিরাগত মানুষ দেখেছি। তাদের দেখে ছাত্রও মনে হয়নি। তাদের আক্রমণাত্মক আচরণে দোকান খোলা রাখতে পারিনি। এখন দোকান খুললেও ভয় কাজ করছে। এ কয়দিনে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন হাইকোর্টের আইনজীবী ফরহাদউদ্দীন। তিনি বলেন, নাশকতা চলাকালে গত কয়েকদিন ঘরে বসেই কাটিয়েছি। জানালা থেকে অনেক ঘটনা দেখেছি, তাতে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। মনে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। বাচ্চারাও আতঙ্কিত, যার রেশ এখনো কাটেনি। দুর্বৃত্তদের উচ্ছৃঙ্খলতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিয়ার শেল, সাইরেন কিংবা র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল সব কিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে যুদ্ধ এলাকায় ছিলাম এই কয়েকদিন। ঘুমের মধ্যে এখনো আমি আঁতকে উঠি।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে অভিযান। অভিযানকে ঘিরেও জনমনে আতঙ্ক কাজ করছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। তবে ১৮ থেকে ২০ জুলাই এই তিনদিনে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয় এবং ৮৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুসারে গত ১০ দিনে ঢাকাসহ ৫৩টি মহানগর ও জেলায় ৫৫৫টি মামলা হয়েছে। এসময়ে সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ২৬৪ জন।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন