প্রভাত রিপোর্ট : সারা দেশের পুলিশ সদস্যকে ৮ আগস্ট সন্ধ্যার মধ্যে নিজ নিজ পুলিশ লাইন্স, দপ্তরে, পিওএম, ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
বুধবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নতুন আইজিপি। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে শুরু করতে চাই। তাই সবাইকে আগামী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলন দমনে অপারেশনাল ভুলত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। সবকিছুর জন্য আইজিপি হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন, জেলা, নৌ, রেলওয়ে ও হাইওয়ে থানার অফিসার ও ফোর্স স্ব-স্ব পুলিশ লাইন্সে যোগাদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপারগণ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রের থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বর্ণিত কমিটি থানা ও থানা এলাকার নিরাপত্তা বিধানে আপদকালীন সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।
আমি পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সকল স্তরের সহকর্মীকে সামাজিক মাধ্যমে কোনো প্রকার ব্যক্তিগত, সমিতি, ব্যাচ, অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোনো দাবি, মন্তব্য, প্রতিউত্তর প্রদানে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই, আমরা সবসময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পারষ্পরিক সৌহার্দ, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জ্বীবিত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সকলে একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।
নতুন আইজিপি বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাবিলাসী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত এবং নিগৃহীত হয়েছেন। এই সন্ধিক্ষণে আমি সকল পুলিশ সদস্যকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই, আপনারা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন। আপনাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, দেশের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনালগ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং দেশের সম্মানিত সকল নাগরিককে তাদের আন্তরিক ভূমিকার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমি বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি হিসেবে আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের সকল উদ্যোগ ও কার্যক্রমে আমরা সবসময় আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে আসছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আজকের এই প্রেস ব্রিফিং-এ আপনাদের মূল্যবান সময় প্রদানের জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমি আর একটি কথা পুর্নব্যক্ত করতে চাই, আমরা বর্তমান পরিস্থিতি যথাযথ মূল্যায়ন করে জননিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে জনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি এবং সে লক্ষ্য পূরণে সকলে মিলে কাজ করছি। আমি আজকে কোনো প্রশ্ন ও মন্তব্য না নিয়ে সকলকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে এ প্রেস ব্রিফিং শেষ করছি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে নতুন আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব প্রদান করায় মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আজ এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আমি আপনাদের সম্মুখে হাজির হয়েছি। বিরাজমান বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিবর্তনমূলক কার্যক্রমের ফলে সদ্য সংঘটিত ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অভূতপূর্ব গণদাবি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আমরা এখন এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। এই আন্দোলনে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকে শহীদ হয়েছেন। আমি প্রত্যেক বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তাঁদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত একটি ঐতিহ্যবাহী পেশাদার ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মূহুর্তে এই বাহিনী সবসময় সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এজন্য বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ হতে আমি পুলিশ প্রধান হিসেবে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা এখন হতে আমাদের উপর অর্পিত আইনী সকল দায়িত্ব পালনে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।