বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo
ইসলামি ব্যাংকে গোলাগুলি

খেলাপিদের ধরতে অভিযান শুরু করছে অর্থমন্ত্রণালয়

প্রকাশিত - ১১ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:৩২ পিএম
webnews24

 

আরাফাত দাড়িয়া : নতুন সরকার গঠনের পর নিয়োগ পাওয়া এস আলমের কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দিয়েছেন বিক্ষুব্দ ব্যাংকাররা। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকে যারা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের নিয়োগ বাতিল করতেই গত তিনদিন ধরে এই বিক্ষোভ করেন ব্যাংকাররা। গতকাল ইসলামী ব্যাংকের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলিতে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এদিকে সালমান এফ রহমানের পদত্যাগের জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করেন।  গতকাল পল্টনে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে চাকুরিচ্যুত কর্মকর্তা ও কর্মচারি মিলে প্রায় দুইশ ব্যক্তি সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকোর সব পরিচালকদের পদ্যতাগ দাবি করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেন। বিক্ষোভে ব্যক্তিরা আইএফআইসি ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট, তার লুটপাটের সহযোগী সাবেক এমডি এবং বর্তমান উপদেষ্টা শাহ এ সরোয়ারেরর পদত্যাগ দাবি করেন। পাশাপাশি তাদের পুনরায় চাকুরির পুনর্বহালের দাবি করেন। 
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার প্রথমদিনেই ঘটে এই ঘটনা। এর আগেই অবশ্য ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ধীরে ধীরে ফুঁেস উঠছিলেন। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কাল। শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আলীকে পদত্যাগে বাধ্য করান তারা। ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী এ প্রসংগে বলেন, ‘গতকাল জানতে পারি এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের যারা আছেন তারা একত্রিত হচ্ছেন। যারা ব্যাংকটিকে লুটপাট করেছে তারা চাইছে নিজেদের লোক ব্যাংকে রাখতে। এ তথ্য পেয়ে তারা যাতে ব্যাংকে ঢুকতে না পারে সেজন্য ব্যাংকের সামনে আমরা অবস্থান নিই। একটা পর্যায় এস আলমের লোকজন সিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। তারা মিছিল নিয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চান। তখন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিহত করতে গেলে এস আলমের লোকজন গুলি চালায়। তাতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকাররা সে সময় প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যান।’
এদিকে অর্থনীতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন ব্যাংকারদের নির্দেশ দিয়েছেন। হুন্ডি এবং টাকা পাচার রোধে প্রতি গ্রাহক নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবেনা বলে ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে 
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে সন্দেহজনক লেনদেন হলে সেটাও খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। তারুল্য সংকটের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্থনীতির গতি তলানিতে গিয়ে ঠেকছিলো। সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন দায়িত্ব দেয়া হয় অর্থমন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 
আগে যেমন ইচ্ছে করে খেলাপি ঋন হলেও উল্টো বছরের পর বছর খেলাপিদের নানান সুবিধা দিয়ে আসছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এখন সেই ব্যবস্থা থাকছেনা বলে জানা গেছে। যেমন আসল খেলাপি ঋণ ছিলো দুই লাখ কিন্তু তদন্তের পর সেই অংক দেখা যায় চার লাখে। প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে নানা সুবিধা দিয়ে আসছিলো ব্যাংকগুলো। আর এই সুবিধা দেয়ার পেছনে অবদান ছিলো সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমান ছিলো প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ১৫ বছর রাজত্ব করে সেই ঋণের পরিমান গিয়ে ঠেকেছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এ প্রসংগে বলেন, ‘কিছু লোন ডিসট্রেসড অবস্থায় আছে। তারপর মামলার কারণে বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে। সেগুলো এখানে যুক্ত হয়েছে কি না তা আমরা জানিনা। কিছু দিন আগে আমরা ব্যাংকিং খাতে সংলাপ করেছিলাম। সেখানে ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো প্রায় চার লাখ কোটি টাকার মতো। এর কত ভাগ ফেরত আসবে কেউ জানেনা।’ 
ঋণ খেলাপিদের যখন এই অবস্থা তখন দেশের তারুল্য সংকট তো বাড়বেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আর এরই মধ্যে ব্যাংক পাড়ায় দখলবাজি কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ উপষ্টো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোন ধরনের দুর্নীতিকে তারা প্রশ্রয় দিবেন না। ব্যাংকগুলোকে একটা নিয়মের মধ্যে এনে দেশের অর্থনীতিতে নতুন কিছু আনা হবে বলেও জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন। কাল ইসলামী ব্যাংকের গোলাগুলির পরও সেনাবাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন এনে ফের ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও খুব শীঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। 
তবে ব্যাংকিং সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হলে মূল্যস্ফীতি নিয়েও সরকারকে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস যেন না হয় সেদিকে নজরদারি দেয়া হবে বলে জানা গেছে। দেশে অনেকদিন ধরে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি আলোচিত হয়ে আসছে। বাজারে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম। এর ফলে সাধারণ গরীব মানুষ তো বটেই, এমনকি মধ্যবিত্তদের ও নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। অর্থনীতির পরিভাষায় গড় মুজুরির চেয়ে গড় মূল্যস্ফীতি বেশি হলে, সেটি দেশের অর্থনীতির দুরবস্থাকেই ইঙ্গিত করে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগ ও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার আশা করছে, যেসব ব্যাংকে দুর্বলতা রয়েছে তাদেরকে একটা টাইম লাইন বেঁেধ দিলে এই টানাপোড়ন থাকবেনা। এর সুফল দেশের জনগনও পেতে শুরু করবে খুব শীঘ্রই-এমনটি মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 


 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন