বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

দেড় দশকের সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেখে সরকারের বিদায়

প্রকাশিত - ১৩ আগস্ট, ২০২৪   ০৮:৫৯ পিএম
webnews24

প্রভাত বাণিজ্য : দেশে ২০১০-১১ অর্থবছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে গত প্রায় দেড় দশকের মধ্যে গত মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি ঠেকে ১২ দশমিক ৩ শতাংশে। তারপর এই প্রথম আবার তা সাড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেল। 
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ হিসেবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার ভুল মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি গ্রহণ করেছিল। দীর্ঘদিন তারা সুদের হারে পরিবর্তন আনেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের ঋণ নিয়েছিল, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়।
জুলাইয়ের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) ও মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মাসে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ শতাংশের বেশি, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ। এছাড়া গত মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতিও ছিল দুই অংকের ঘরে।
বিগত সরকারের শেষ দুই বছর দেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এ দুই বছরের প্রায় প্রতি মাসেই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড তৈরি হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে, তাতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিও বড় ধরনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, অনেক পরে গিয়ে সরকার কিছু নীতি পরিবর্তন করলেও তা কাজে আসেনি। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে তারা শুল্ক ছাড় দেয়নি। ৩০ শতাংশ টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছিল, তখন শুল্ক ছাড় দেয়া যেত। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারণ তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র ছিল।
বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হবে। এখনো সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হয়নি। আর অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবিএসের তথ্যমতে, গত মাসে গ্রাম এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, শহর এলাকায় ছিল ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে গ্রাম এলাকার চেয়ে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। গ্রাম এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, শহর এলাকায় ছিল ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাবে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। মূলত এ কারণে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায়। 
এ বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে. মুজেরী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা এমনিতে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটেছিল; বাধাগ্রস্ত হয়েছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের ঘরে ছিল। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনমান নিচে নেমে গেছে। সরকার কিছু সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। আবার মধ্যবিত্ত শ্রেণীকেও এটা অসন্তুষ্ট করে তুলেছিল। ফলে তারা ছাত্রদের সঙ্গে মিলে রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবেশী দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বিগত সরকার কেন ব্যর্থ হয়েছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর্থিক নীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে আমাদের এখানে অন্য দেশের মতো সমন্বয় ছিল না। সিন্ডিকেটসহ বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ছিল। সুদের হার বেঁধে রাখা হয়েছিল। কয়েকটি আমদানিকারক গোষ্ঠী বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়েছিল। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি বড় প্রভাব ফেলেছিল। আর খেলাপি ঋণের কারণে নতুন বিনিয়োগ সক্ষমতা তৈরি হয়নি।
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন