প্রভাত অর্থনীতি : চট্টগ্রামের বাজারে দেশি পেঁয়াজের চাহিদা না থাকায় বাজারে সরবরাহও কম। খাতুনগঞ্জের আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদাই বেশি। এ ছাড়া পাকিস্তান ও চীন থেকেও আমদানি করা হয় পেঁয়াজ। গতকাল শনিবার নগরের খাতুনগঞ্জ পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ৯২ থেকে ৯৫ টাকা। এ ছাড়া পাকিস্তান ও চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়।
এক মাস ধরে চলা আন্দোলন ও ক্ষমতার পটপরিবর্তনে প্রভাব পড়েছিল চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের আড়তগুলোতে। জুলাই মাসের শেষের দিকে বাজারে কয়েক দিনের ব্যবধানে পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময় অধিকাংশ আড়ত বন্ধ ছিল। জুলাইয়ে আন্দোলন দমনে কারফিউ জারির পর পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এরপর আড়তগুলো খুলতে শুরু করে। গত এক সপ্তাহে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও আছদগঞ্জের সব মোকাম খুলেছে। এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে বাজারে মিনি ট্রাক, ভ্যান ও পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ৯ আগস্ট এ তিন বাজারের অধিকাংশ সড়ক ফাঁকা থাকলেও এ সপ্তাহে চিত্র ছিল আলাদা।
বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম। পাইকারি দাম কমতে শুরু করলেও খুচরা পর্যায়ে এসব পণ্যের দামে এখনো তেমন প্রভাব পড়েনি। গত সাত দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। যদিও এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে আদা ও রসুনের দাম কমেছে কেজিতে ৭ থেকে ১৫ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ভারতীয় প্রতি পেঁয়াজের কেনা দাম পড়ছে ৯৫ থেকে ৯৭ টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, বাজারে পণ্যের দাম নির্ভর করে চাহিদার ওপর। বর্তমানে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বাজারে খুব বেশি ক্রেতা নেই। ক্রেতা কম থাকায় দামও কমে গেছে। যেহেতু পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য, তাই কেনা দাম বেশি হওয়ার পরও লোকসানে বাজারমূল্যে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার সবজির আড়তে গত তিন দিনে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আড়তদারেরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেশি। যেহেতু সবজি পচনশীল পণ্য, তাই মজুত করে রাখার সুযোগ নেই। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে গত কয়েক দিনে। তবে সরবরাহ না থাকায় কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল শনিবার রেয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপিসহ অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা দরে। তবে কাঁকরোল, শিমসহ বেশ কিছু সবজির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী বলেন, চাহিদার তুলনায় সবজির জোগান বেশি। তাই দাম অনেক কমেছে। বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, গত এক সপ্তাহে বাজার অনেক স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ক্রেতা কম। বর্তমানে বাজারে সব মোকাম খোলা।
পাইকারি বাজারে ক্রেতা কম হলেও চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে কয়েক দিন ধরে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরায় পণ্যের দামের তার কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে পণ্য সরবরাহ থাকলেও অধিকাংশ পণ্যের দাম বাড়তি দিকে।
নগরের বহদ্দারহাট ও চকবাজারে আজ প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকার বিক্রি হয়েছে। এসব বাজারে পাকিস্তান কিংবা চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, চীনা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের চাহিদা না থাকায় এসব পেঁয়াজ বাজারে আনেন না বিক্রেতারা।
নগরীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামের তেমন কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। অধিকাংশ সবজির দাম ৪০ থেকে ৬০ টাকার আশপাশে। তবে বাজারভেদে এ দামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম) বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, নগরে হাজার হাজার খুচরা বিক্রেতা। অধিকাংশ বিক্রেতা রসিদ সংরক্ষণ করেন না। ফলে দামের তারতম্য হচ্ছে। জরিমানা করেও তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর জন্য ব্যবসায়ী পর্যায়েও সচেতনতা দরকার।