প্রভাত রিপোর্ট : বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি এলপি (লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম) গ্যাসের দাম ১ হাজার ৪১৯ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএলের একই গ্যাসের দাম মাত্র ৬৯০ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান তরলীকৃত এই পেট্রোলিয়াম গ্যাস বিক্রি করে এত টাকা কম পেলেও এর সিকিভাগ সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। বছরে প্রায় শত কোটি টাকা গচ্ছাই যাচ্ছে এলপি গ্যাস লিমিটেডের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালন মুনাফা করেছে মাত্র ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, বণ্টন পলিসিতে মার খাওয়ার জন্যই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির এ অবস্থা। জানা যায়, ১৯৭৭-৭৮ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াজাত করার সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদিত এলপিজি সংগ্রহ করে বোতলজাত শেষে বাজারজাত করতে চট্টগ্রামে এলপিজি স্টোরেজ ও বটলিং প্ল্যান্ট নির্মাণ করে বিপিসি। প্রথমে যমুনা অয়েল লিমিটেড প্ল্যান্টটি বসালেও বর্তমানে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলপিজি বোতলজাত করছে এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)।
প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম ও কৈলাসটিলা প্ল্যান্টে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন এলপিজি বিক্রি করে। এর মধ্যে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের ৯ লাখ ২১ হাজার ৮৪০ বোতল এলপি গ্যাস বিপণন কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ করেছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬শ বোতল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ২ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ বোতল, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬০ বোতল এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এসএওসিএল) ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৬০ বোতল এলপি গ্যাস বাজারজাত করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ গ্যাস বোতলজাত করে এলপিজিএল। একইভাবে আগের চার বছরে (২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর) পদ্মা অয়েল মোট ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৯২০ বোতল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ১২ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ বোতল, যমুনা অয়েল ১১ লাখ ৫০ হাজার ৮শ বোতল এবং এসএওসিএল ৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৪০ বোতল এলপি গ্যাস বাজারজাত করে।
এলপিজিএল সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এলপিজি সংগ্রহ করে বোতলজাত করার পর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চার বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে সরবরাহ দেয়া হয়। এলপিজিএল সাড়ে ১২ কেজির প্রতি বোতল গ্যাসের ভোক্তামূল্য (ভ্যাটসহ) ৬৯০ টাকা নির্ধারণ করা আছে। প্রতি বোতল সাকুল্যে ৫৬০ টাকা দরে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করে এলপিজিএল। কিন্তু বিপণনকারী চার প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এলএওসিএল ৬৫৫ টাকায় ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে এসব গ্যাস। এতে বোতলপ্রতি ৯৫ টাকা করে পায় বিপিসির এ চার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
বেসরকারি খাতের ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি গ্যাসের দাম প্রতি মাসে নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিইআরসি জুন মাসে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে ১৩৬৩ টাকা এবং সাড়ে ১২ কেজির এলপি গ্যাসের দাম ধরা হয় ১৪১৯ টাকা।
বিআরসি ঘোষিত বেসরকারি পর্যায়ে সিলিন্ডারপ্রতি সাড়ে ১২ কেজি এলপি গ্যাসের মূল্যের চেয়ে সরকারি এলপিজিএলের গ্যাসের দাম বিপিসি নির্ধারিত দর অনুযায়ী ৭২৯ টাকা কম। এতে এলপিজিএলের ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজারজাত করা সরকারি ১৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন এলপিজিতে কমপক্ষে ৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮শ টাকা কম আয় হয়েছে এলপিজিএলের। একই ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ হাজার ৫০১ টন এলপি গ্যাস বাজারজাত করে প্রায় ৭৩ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ হাজার ৪০১ টন বাজারজাত করে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা আয় কমে যায় কোম্পানিটির।
এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বিপিসির চার বিপণন প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এসএওসিএলের নিয়োগ করা ঠিকাদারদের সরবরাহ করি। সব সিদ্ধান্তই বিপিসির নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, এখন এলপিজিএলের বটলিং প্রক্রিয়া অটোমেশন হচ্ছে। এতে কাজের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশি লাভের মুখ দেখবে।