প্রভাত রিপোর্ট : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগে আরও ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর ও জয়পুরহাটে নিহতের ঘটনায় ৩টি; ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে ১টি; ২০১৫ সালে কারওয়ান বাজার এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ১০টি মামলা হলো। এর মধ্যে ৮টি মামলা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে আর একটি মামলা করা হয় গুম এবং অপহরণের অভিযোগে। অপর মামলাটি হয়েছে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায়।
জানা যায়, রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন এলাকায় ২ শিক্ষার্থীকে হত্যা, গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এবং জয়পুরহাটে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার ওরফে বিশাল গুলিতে নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার এক মাস পর রবিবার দুপুরে রংপুর মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে নিহত আব্দুল্লাহ আল তাহিরের (২৮) বাবা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান পেশকার রাজু মিয়া।
বিগত ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গত রবিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল ফারাবীর আদালতে এই মামলা করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। এর আগে জাকী-আল ফারাবীর আদালতে মামলার আবেদন করেন এই রাজনীতিবিদ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মতিঝিল থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার আবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৪৭/৩৬৫/৩৬৬/৩০৭/৩২৬/৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া বিরোধী দলে থাকাকালীন ২০১৫ সালে কারওয়ান বাজারে এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করা হয়েছে। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৭০০ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হাসান স্বজন নামে এক চাকরিজীবী নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড়শ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে নিহত স্বজনের ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার টিটু।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর সূত্রাপুর থানাধীন এলাকায় ২ শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। রবিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে নাসরিন বেগম নামে এক নারী এই মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আদেশ অপেক্ষমাণ রেখেছেন। আর জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার ওরফে বিশাল গুলিতে নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত নজিবুল সরকার ওরফে বিশালের বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে এই মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে জয়পুরহাট সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।