প্রভাত রিপোর্ট : বানভাসিদের বাঁচাতে স্বেচ্ছাসেবকরা লড়াই চলালেও নৌযান সংকটে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ কেমন আছে, জানে না কেউ। ক্ষুধার্ত মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন আসবে উদ্ধার যান আর আহার নিবারণের খাবার। আশ্রয়কেন্দ্রে যাদের ঠাঁই মিলেছে, তারাও পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় খাবার। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী, শিশু ও বয়স্করা। যতই দিন গড়াচ্ছে, লড়াইয়ের শক্তিও হারিয়ে ফেলছেন তারা। বন্যার কারণে বাড়ছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা বেশি। দূষিত পানি পান ও বন্যার পানিতে চলাফেরার কারণে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও চোখের প্রদাহ বেশি দেখা দিচ্ছে।
ভারী বৃষ্টি আর ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ঢলে ভয়ংকর এক বন্যার মুখোমুখি ১১ জেলার মানুষ। আশার খবর হলো. ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে সর্বনাশা বানের পানি। ফলে টানা পাঁচ দিন জলমগ্ন থাকা জনপদ বন্যার ক্ষতচিহ্ন নিয়ে বেরিয়ে আসছে। তবে এখনও ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। সেখানে নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও ওষুধ। ত্রাণের হাহাকার এখনও দুর্গম এলাকায় রয়েই গেছে। বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, খুলনার কিছু নি¤œাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী শহরের অধিকাংশ এলাকায় পানি কমে সচল হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। পাঁচ দিন পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশ সচল হলেও ব্যাপক জটে আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। বন্ধ থাকা রেলপথও সচল হচ্ছে। ফেনীর বানভাসি মানুষের দুঃসময়ে সহযোগিতা করতে রিলিফ ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। তবে ফেনী শহরের বাইরের অঞ্চল, বিশেষ করে ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও পরশুরাম এখনও বিচ্ছিন্ন। সোনাগাজী ও দাগনভূঞায়ও গতকাল থেকে পানি বাড়ছে। সড়ক থেকে শুরু করে গৃহস্থের ঘর, কিছুই আর অক্ষত নেই। এর মধ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ। সাপের ছোবলেও ক্ষতবিক্ষত বহু মানুষ। তবে নেই তেমন চিকিৎসা। ফেনীতে পানিতে ডুবে থাকা হাসপাতালগুলো হয়নি সচল। ওষুধ আর চিকিৎসা না পেয়ে কাতরাচ্ছেন অসুস্থ রোগী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যায় এখনও দেশের ১১ জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯ পরিবার পানিবন্দি। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮।
এনিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। নতুন করে কোনো জেলা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা নেই। বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে সচিব জানান, এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৭৩ জন। সেই সঙ্গে ২২ হাজার ২৯৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসায় ৭৪৮টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, সুপেয় পানি পাওয়া ও পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বন্যার পানি অধিকাংশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিটির ক্যাম্পাস প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকও প্লাবিত। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ জেলায় শতাধিক চিকিৎসা দল কাজ করছে। তবে সামনে যে সংকট তৈরি হবে, এর জন্য চিকিৎসক ও ওষুধের পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার।
এছাড়াও নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আরা জানান, ২০ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা।
বন্যার পানি কমতে শুরু করায় হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হচ্ছে। বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদনদীর পানি। মৌলভীবাজারের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ কাটেনি।
খুলনায় নতুন করে ভারী বৃষ্টিতে ফের তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক ও নি¤œাঞ্চল।ডুমুরিয়াতে অবিরাম বর্ষণে উপজেলার নি¤œাঞ্চলের ২২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। পাইকগাছার ১৩ গ্রামের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন ও পাউবো চার দিন ধরে চেষ্টা করেও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করতে পারেনি।
বাগেরহাট শহরের বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী। এ ছাড়া রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, কচুয়ার নি¤œাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে।