প্রভাত সংবাদদাতা, বান্দরবান : বান্দরবানের থানচি উপজেলার মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘেষা দুর্গম পাড়াগুলোয় খাদ্যের প্রচন্ড অভাব দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের ঘরে রান্নার চাল নেই, চলছে অর্থ সঙ্কট। গতবছর বন্যায় জুমের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পর্যাপ্ত ফসল পায়নি তারা। এ কারণে ৪টি পাড়ায় ৬৪ পরিবারের খাদ্যশস্য না থাকায় বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছে তিন শতাধিক মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মায়ানমার সীমান্তবর্তী ঘেষা দুর্গম এলাকা মেনহাক পাড়া, বুলু পাড়া, তাংখোয়াই পাড়া, য়ংডং পাড়ায় প্রায় ৬৪টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুম চাষ থেকেই পরিবারগুলোর খাদ্যের যোগান আসে। কিন্তু গতবছর বন্যার কারণে জুমের ফলন ক্ষতি হওয়ায় সারাবছরের খাদ্য উৎপাদন করতে পারেনি তারা। বর্তমানে তাদের ঘরে কোনো ধান ও চাউল নেই। হাতে নেই টাকা। বছর পেরোনোর আগে গত মে মাস থেকে এই ৪টি পাড়ায় খাদ্যে অভাব দেখা দিয়েছে।
আরও জানা গেছে, খাদ্য যোগান দিতে প্রতিদিন জঙ্গল থেকে বাঁশ কোড়ল খুঁজে সিদ্ধ করে দিনের পর দিন পার করছে এই চার পাড়ার বাসিন্দারা। অন্য পাড়ার বিভিন্ন পরিবার থেকে ধার–দেনা করে কোনো রকম খেয়ে বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, সীমান্তবর্তী পাড়াগুলোয় যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। থানচি উপজেলা সদর থেকে রেমাক্রি ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সিমান্ত লাগোয়া ওইসব পাড়ায় নৌপথে যেতে সময় লাগে দুদিন। তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস জুম চাষ। জুমের ধান ও ফলন ভালো হলে পরিবারের অভাব কিছুটা কমে। ফলন ভালো না হলে বছরজুড়ে দেখা দেয় খাদ্যের অভাব। অন্যদিকে সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ার ফলে সদর বাজারে যেতে পারছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। কেননা বর্ষা মৌসুমে নদী পথে পণ্য আনা নেয়ার খরচও দ্বিগুণ বেশি। এমন দুর্ভোগের দিনে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি পাশে দাঁড়ানো আহ্বান জানান সীমান্তবর্তী বসবাসকারীরা।
সীমান্তবর্তী এলাকার আদা পাড়ার বাসিন্দা ঙৈলিং ম্রো বলেন, গতবছর বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। এই বছরও বন্যার কারণে জুমের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমাদের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে বাঁশ কোড়ল খাচ্ছে গ্রামবাসী। সরকার থেকেও কিছু সহযোগিতা পায় না।
কয়েকটি এলাকার পাড়া প্রধান (কারবারি) বুলু ম্রো, মেনহাত ম্রো ও চিংক্রা ম্রো বলেন, ‘গত বছর অতিবর্ষণের কারণে জুমিয়ানরা তেমন ফসল পায়নি। থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১৩টি পাড়া রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি পাড়ার প্রায় ৬৪টি পরিবারে খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। এদের ঘরে কোনো চাউল নেই। জঙ্গল থেকে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ করে সিদ্ধ করে তিন বেলা খাবার খাচ্ছে। বাকি ৯টি গ্রামের জুমের ধান প্রায় শেষের পথে। তাদের মধ্যে যাদের ঘরে ধান আছে তারা একজন আরেকজনকে ধান দিয়ে সাহায্য করছে।
থানচি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো বলেন, মায়ানমার সীমান্তবর্তী ৪টি পাড়ায় ৫০-৬৪টি পরিবার বাস করে। ওই খানে ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। তাদের অবস্থা খুবই করুণ। বাঁশ কোড়ল খেয়ে জীবনযাপন করছে। নদীতে পানির স্রোত বেশি এবং অর্থাভাব থাকায় সদরে গিয়ে চাউল কেনার মতো টাকাও নেই তাদের।
রেমাক্রি ইউপি চেয়ারম্যান মুই শৈথুই মারমা বলেন, খাদ্য সংকটের কথা বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। সেসব এলাকায় ১টন খাদ্যশষ্য দেয়া হবে। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে যা করণীয় করবেন।
থানচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, রেমাক্রি ইউনিয়নটা অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। লিক্রি, তাংখোয়াই পাড়াসহ আরও কিছু পাড়া নেটওয়ার্কবিহীন। সহজে যোগাযোগ করা যায় না। ওইখানে বেশ কিছু পাড়ায় খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। গত রোববার দুটি নৌকা করে ১ টন চাল আমরা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাহ্ মোহাজিদ উদ্দিন বলেন, খাদ্য সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে যা যা করণীয় থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি।