শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

দেশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি নতুন শঙ্কা ভারতের রেড অ্যালার্ট

প্রকাশিত - ২৭ আগস্ট, ২০২৪   ০৭:৫০ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : কয়েকদিনের টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সৃষ্ট বাংলাদেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। খোয়াই, মনু এবং ফেনী নদীর তিনটি পয়েন্টে পানির স্তর ইতোমধ্যেই বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর যে তিনটি পয়েন্টে বর্তমানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, সেগুলোও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও ভারতে বন্যার রেড অ্যালার্টের কারণে নতুন শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এদিন বিকালের মধ্যে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে চট্টগ্রামের বন্যাদুর্গত এলাকার কোথাও কোথাও অবস্থার অবনতির আশঙ্কা করছেন অনেকে।
সরকারি তথ্যমতে, গত কয়েকদিনের বন্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-প্র্বূাঞ্চলের অন্তত ১১টি জেলা কবলিত হয়েছে, যাতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম জেলার মানুষ।
চারপাশে পানি, সারা দেশ থেকে সহায়তা নিয়ে ছুটে আসছে মানুষ। বন্যায় ধুঁকছে দেশের ১১ জেলা। বন্যা পরিস্থিতিতে শুরুতে থাকে মানুষ প্রাণী উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চ্যালেঞ্জ। তারপর পানি নামা পর্যন্ত সমন্বিত প্রচেষ্টায় ত্রাণ আর নানাবিধ প্রয়োজন মেটে। আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের মন পড়ে থাকে ফেলে আসা ভিটের কাছে। যেকোনও বন্যা পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে কে কার ঘরে কী দেখবেন সেই আতঙ্ক থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিরে গিয়ে একদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানা, আরেক দিকে পুনর্বাসনের লড়াই। পানি বাড়তির সময় যে পরিমাণ মনোযোগ ও সাহায্য তারা পান, ফেরার পর কেউ মনে রাখে না। তখন শুরু হয় আসল লড়াই।
বন্যা পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো জানতে চাইলে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ম ইনামুল হক বলেন, অবকাঠামো ও পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জই প্রধান হয়ে সামনে দেখা যায়। বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, যত শিগগিরই সম্ভব সেগুলো পুনর্নিমাণ করা দরকার। একইসঙ্গে খাল যে কয়টা আছে বন্যার কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে, সেসব দ্রুত খননের ব্যবস্থা করে পানি নিষ্কাশন করতে হবে। কারণ এ বছরের মতো বন্যা শেষ হয়ে গেছে বলা যাচ্ছে না।
পুনর্বাসন বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকা ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছে সেসব জায়গায় সুষ্ঠু পুনর্বাসন জরুরি। যারা ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কাজ করছে সেই তরুণরা ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ, প্রান্তিক পরিবারগুলোর সঙ্গে থেকে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে ফেরানোর কাজটি শেষ করবেন সেই পরিকল্পনা থাকা দরকার। জাতি হিসেবে আমাদের ঐক্য দেখতে পেয়েছি আমরা। এখন পুনর্বাসন কাজে মনোযোগ দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত বন্যায় দূষিত পানি বাড়ির আঙ্গিনাসহ ঘরের ভেতরে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। সেদিকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ঘরের মেঝে, ফার্নিচার, দরজার হাতল এবং পানির কলগুলো জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক। ঘরে যেন বায়ু চলাচল করতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষ।
আক্রান্ত এলাকায় বীজ সরবরাহের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রাকৃতিক কৃষির কৃষক ও সমন্বয়কারী দেলোয়ার জাহান বলেন, কোন গ্রামে কৃষকদের কোন ধরনের বীজ দরকার হবে সেটা জেনে নিয়ে যেন আমরা আমাদের সাধ্যমতো সরবরাহ করতে পারি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পানি নেমে যাওয়ার পরে কৃষিক্ষেত্রে করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত বন্যাকে কৃষির জন্য ইতিবাচক হিসেবে ভাবতে শিখতে হবে। দীর্ঘদিন বন্যা হয়নি এমন এলাকায় বন্যা হওয়া মানে মাটি উর্বর হবে। পানি চলে যাওয়ার পরে এই কাদার মধ্যেই বপন করা যায় এমন আমন চাষের সুযোগ নিতে হবে। এই মাটিতে মাসকলাইয়ের ফলন ভালো হবে। যত রকমের শাক-সবজি আছে সেগুলো কাদামাটিতে খুব ভালো হবে। পানি নামবে, মাটি শুকাবে, তারপর চাষের ব্যবস্থা হবে এই ধারণা থেকে বের হয়ে এই মাটিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা ভাবতে হবে। আর পানি নামার পরে ছোট ছোট ডোবাগুলোতে প্রচুর দেশি পোনা ডিম থাকবে, সেগুলোর পরিচর্যা কীভাবে করা যায় মৎস বিভাগ সেটা ভেবে দেখতে পারে। বিষ দিয়ে সব মেরে, তারপর পানি উপযোগী করে পোনা ছাড়ার ব্যবস্থার মতো সেকেলে ভাবনা দূর করে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। একইসঙ্গে গবাদিপশু পুষ্টিহীন হওয়ার একটা শঙ্কা থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে।


 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে অসত্য তথ্য পরিবেশনের তীব্র প্রতিবাদ
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা