সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

পানির নিচে খাট কাটে নির্ঘুম রাত 

প্রকাশিত - ৩০ আগস্ট, ২০২৪   ০৮:০৬ পিএম
webnews24

জিহাদ হোসেন রাহাত , রায়পুর : বন্যায় কোমর সমান পানিতে বারো ও পনেরো ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থের একটি দোচালা টিনের ঘরে বসবাস করেন স্বামী পরিত্যাক্তা নারী পেয়ারা বেগম। ঘরে একটি মাত্র খাট থাকলেও সেটি ডুবে আছে পানিতে। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় বিশ বছর আগে তাকে ছেড়ে যান স্বামী। পেয়ারা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ আমিন উদ্দিন মুন্সি বাড়ির বাসিন্দা। বছর তেইশ আগে স্বজনরা পাত্র খুঁজে এনে বাক প্রতিবন্ধী পেয়ারাকে দেন বিয়ে। বিয়ের তিন বছর যেতেই একদিন হুট করে সংসার ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমান আলমগীর। স্বামীর স্মৃতি চিহ্ন হয়ে পেয়ারার কোলে ঠাঁই হয় শারমিন আক্তার নামে এক কন্যা সন্তানের। বিশ বছর বয়েসী শারমিন মায়ের মতোই বাক প্রতিবন্ধী। চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে পানিতে খাট ডুবে থাকায় নির্ঘুম রাত কাটে তাদের।  
মুখে ভাষা নেই, কাউকে বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা নেই- ঠিক কতটুকু কষ্টে আছেন তারা। ঘরের ভেতরকার অবস্থা একেবারেই বেহাল। বহু বছরের পুরোনো একটি পানির কলস, জগ ও কয়েকটি গ্লাস-প্লেট রয়েছে তার বসতঘরে। চোখ বুলিয়ে দেখলে পুরো ঘরটিকে মনে হবে, সেটি যেন জীবন্ত একটি শরনার্থী ক্যাম্প।
পানিবন্দি অবস্থায় নির্মম বাস্তবতায় দিন কাটছে তাদের। পেয়ারার বাবা আতিক উল্ল্যার রেখে যাওয়া শেষ সম্বল টিনের ঘরটিকে আঁকড়ে ধরে কোনো মতে টিঁকে আছে মা-মেয়ের সংসার। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। বুক সমান দুঃখের সংসার ছেড়ে স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার প্রায় বিশ বছর পর কোমর সমান পানিতে ভেসে পুনরায় দুঃখ বুনছেন পেয়ারা। অবশ্য এবার বুননে তার সঙ্গী হয়েছে মেয়ে শারমিনও।
দুজনের মুখে কথা না ফুটলেও চিন্তায় মগ্ন অবস্থায় আকারে ইঙ্গিতে পঞ্চাশোর্ধ পেয়ারা বেগম বলেন,স্বামী ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেছে। মানুষ সাহায্য করে মাঝে মাঝে। ঘরটাও ভেঙে পড়েছে।
মায়ের পর কথা বলেনি মেয়ে। লাজুক ভাব নিয়ে পেছন ফিরে দাঁড়ায় শারমিন। খানিক পরে হাউমাউ করে কান্নার শব্দ আসে ভেসে। তখন মামা পরিচয়ে ছানা উল্লাহ নামে স্থানীয় একজন জানান, ঘরে খাবার নেই তাদের। নেই পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা। মশার কামড় তাদের নিত্যসঙ্গী। তিনি আরও জানান,বন্যার প্রথম দুদিনের পর থেকে প্রায় পাঁচদিন তাদের ঘরে ছিলো না খাবার।
মাইন উদ্দিন নামে এক প্রতিবেশী বলেন, এখন পর্যন্ত দুই প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছেন তারা। নিত্য আহার্য খাবারগুলো পাননি। ঘরটার অবস্থা বেহাল। পানি দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে যেতে হয় বলে অনেকেই ফিরে যান। তাদের পুনর্বাসন প্রয়োজন।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন