বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

নতুন কাঠামোর ইউরোপিয়ান লিগে  বেড়েছে ম্যাচের সংখ্যা, অর্থ পুরস্কার

প্রকাশিত - ৩০ আগস্ট, ২০২৪   ০৮:৩১ পিএম
webnews24

প্রভাত স্পোর্টস : বদলে যাওয়া কাঠামো নিয়ে সেপ্টেম্বরেই শুরু হচ্ছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন মৌসুম। নতুন কাঠামোর চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার দল বেড়েছে, বেড়েছে দলগুলোর ম্যাচের সংখ্যা, বেড়েছে অর্থ পুরস্কারের পরিমাণও। নতুন কাঠামোর নতুন চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্রটাও এবার নতুন পদ্ধতিতে হবে। মোনাকোতে বৃহস্পতিবার সেই ড্র আয়োজন করেছে উয়েফা। আগে ড্রতে কোন গ্রুপে কারা খেলবে, সেটিই নির্ধারিত হতো। এবার থাকছে না গ্রুপ পর্ব। ড্রতে এবার একক পয়েন্ট তালিকার লিগে প্রতিটি দল অন্য কোন আটটি দলের বিপক্ষে খেলবে, সেটিই নির্ধারিত হবে। চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন কাঠামোটা ইউরোপীয় ফুটবলের প্রভাবশালী ক্লাবগুলোর দাবি মেনেই বানিয়েছে উয়েফা। ধনী সেসব ক্লাবের বেশির ভাগ আবদারই মিটিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। চারটি দল বেড়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ এখন ৩৬ দলের। প্রতিটি দলই কমপক্ষে আটটি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। আগে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া দলগুলো খেলত ৬টি করে ম্যাচ। প্রথমবারের মতো জানুয়ারিতে হবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ। মোট আর্থিক পুরস্কার ২৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৫০ কোটি ইউরো, বাংলাদেশের মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। আর্থিক পুরস্কার যেমন বেড়েছে, তেমনি আরও ঠাসা সূচিই আসছে। আগে গ্রুপ পর্বে ম্যাচ ছিল ৯৬টি, এবার তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৪৪টি।
কী কারণে এত পরিবর্তন, সেটি বোঝাতে গিয়ে কিছু মূল উদ্দেশ্যের কথা বলেছে উয়েফা। তাদের ভাষায়, টুর্নামেন্টজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা আরও উন্নত করা ও দুই দলেরই কিছু পাওয়ার বা হারানোর আছেÍএমন ম্যাচের সংখ্যা বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। প্রথম পর্বের অষ্টম বা শেষ রাউন্ডে ৩৬টি দলই একই সময়ে ম্যাচ খেলতে নামবে। সেই দিনটি ২৯ জানুয়ারি। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ আটটি দল সরাসরি চলে যাবে শেষ ষোলোতে। পয়েন্ট তালিকার ৯ থেকে ২৪ নম্বরÍএই ১৬টি দল খেলবে আলাদা একটি নকআউট প্লে-অফ পর্ব। জয়ী আটটি দল মুখোমুখি হবে শেষ ষোলোতে সরাসরি সুযোগ পাওয়া আট দলের। পয়েন্ট তালিকার তলানির ১২টি দল বাদ পড়ে যাবে।
উয়েফার হেড অব কমপিটিশন স্ট্র্যাটেজি স্তেফানে আনসেলমো জানিয়েছেন, প্রথম পর্বে সম্ভাব্য কত পয়েন্ট পেলে নকআউট পর্বে যাওয়া সম্ভব, আমরা কম্পিউটার সিমুলেশন করে দেখেছি, পরের রাউন্ডে উঠতে গড়ে ৭.৬ পয়েন্ট দরকার। যার মানে দুটি জয় ও দুটি ড্র।
অবশ্যই অর্থই মূল কারণ। তবে সেটিই একমাত্র কারণ নয়। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে রূপান্তরের পর ৩২ বছর ধরে ফুটবল–বিশ্বকে সবচেয়ে জমজমাট ও সবচেয়ে উঁচু মানের লড়াই উপহার দিয়ে এসেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাতে প্রাইজমানিও বাড়তে বাড়তে হাজার হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রাইজমানি থেকে পাওয়া অর্থ খরচ করে ক্লাবগুলোও দলবদলে এবং খেলোয়াড়দের বেতন ভাতায় অবিশ্বাস্য রকম খরচ করতে পারছে।
তাতেও যেন মন ভরছিল না ইউরোপিয়ান ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনের (ইসিএ) কর্তাদের। গ্রুপ পর্বকে বড্ড ম্যাড়মেড়ে ও একঘেয়ে মনে হচ্ছিল তাঁদের। তাঁদের চাওয়া ছিল, শক্তিশালী ক্লাবগুলোর মধ্যে আরও বেশি বেশি ম্যাচ। তাতে সম্প্রচারস্বত্ব বাবদ পাওয়া টাকার পরিমাণ আরও বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি দর্শক ও নতুন ফুটবল–ভক্ত পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা। উয়েফা থেকে বেরিয়ে গিয়ে সুপার লিগের মতো আলাদা নতুন লিগ করার পরিকল্পনাও করেছিল তারা।
চ্যাম্পিয়নস লিগ কাঠামো সংস্কারের প্রথম পরিকল্পনা হয় ২০১৯ সালে। কিছু বড় ক্লাবকে সুবিধা দেওয়া হবেÍএ যুক্তিতে তখন মাঝারি মানের ক্লাবগুলো ও ঘরোয়া লিগগুলো বিরোধিতা করেছিল। তবে ২০২১ সালে এপ্রিলে বড় ক্লাবগুলো সুপার লিগ চালুর ঘোষণা দেওয়ার পর সংস্কারে আপত্তি জানানো ক্লাবগুলোই আবার পরিবর্তনের জন্য আলোচনা শুরু করে। আর সেই ধারাবাহিকতাতেই ২০২২ সালে মে মাসে নতুন কাঠামো চূড়ান্ত করে উয়েফা।
সর্বশেষ ২১ মৌসুমেই আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথম পর্বে খেলত ৩২টি দল। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল উঠত শেষ ষোলোতে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে ৬টি করে ম্যাচ খেলত দলগুলো।
এবার প্রথম পর্বে কোনো গ্রুপ নেই। ৩৬টি দলের সব কটিই থাকছে একটি পয়েন্ট তালিকার অধীন। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে প্রতিটি দল দৈবচয়ন পদ্ধতিতে আটটি দলের বিপক্ষে আটটি ম্যাচ খেলবে। এর মধ্যে কোন চারটি ম্যাচ ঘরের মাঠে আর কোন চারটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলবে, সেটিও নির্ধারিত হবে লটারিতে।
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ আট দল মার্চের শেষ ষোলোতে সরাসরি সুযোগ পাবে। পয়েন্ট তালিকায় ৯ থেকে ২৪ নম্বর দল ফেব্রুয়ারিতে নকআউট প্লে-অফের মুখোমুখি হবে। ৯ থেকে ১৬ নম্বর দল ১৭ থেকে ২৪ নম্বর দলের বিপক্ষে খেলবে। ড্রতে নির্ধারিত হবে কোন দল কাদের বিপক্ষে খেলবে। প্লে-অফে জয়ী আট দল যাবে শেষ ষোলোতে। এরপর আগের মতোই কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল।
গত মৌসুমে যে দুটি দেশের ক্লাবগুলো সামগ্রিকভাবে উয়েফার ক্লাব প্রতিযোগিতায় ভালো করেছে, তাদের জন্য বরাদ্দ দুটি জায়গা। গত মৌসুমে ফলের ভিত্তিতে ইতালি ও জার্মানি থেকে বাড়তি দুটি ক্লাব সুযোগ পেয়েছে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে। ইতালি ও জার্মানির শীর্ষ লিগে গত মৌসুমে পঞ্চম হওয়া বোলোনিয়া ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড নতুন নিয়মের কারণেই খেলবে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে।
উয়েফার র‌্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থাকা লিগের তৃতীয় দলটিও এবার সরাসরি সুযোগ পেয়েছে। ফ্রান্সের ব্রেস্ত গত মৌসুমে লিগ আঁতে তৃতীয় হয়ে জায়গা করে নিয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। ৪ নম্বর দলটি আসবে বাছাইপর্ব পেরিয়ে। আগে বাছাইপর্ব পেরিয়ে চারটি দল সুযোগ পেত গ্রুপ পর্বে, এবার পাঁচটি দল পাচ্ছে সেই সুযোগ।
৩৬টি দলকে র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী চারটি পটে বা ভাগে ভাগ করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো থাকবে প্রথম পটে। এবার ড্র হবে ভার্চ্যুয়ালি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে। প্রতিটি দল প্রতিটি ভাগ থেকে দুটি করে প্রতিপক্ষ পাবে। প্রতিটি ভাগ থেকে পাওয়া একটি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ও অন্য দলটির বিপক্ষে তাদের মাঠে খেলবে দলগুলো। শনিবার চূড়ান্ত হবে প্রথম পর্বের সূচি।
এবারের চ্যাম্পিয়ন দল সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ইউরো বা প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা প্রাইজমানি পেতে পারে। চূড়ান্ত পর্বে সুযোগ পাওয়া প্রতিটি দলই ১ কোটি ৮৬ লাখ ইউরো পাবেই। এ ছাড়া প্রতিটি জয়ের জন্য ২১ লাখ ও প্রতিটি ড্রর জন্য ৭ লাখ ইউরো পাবে দলগুলো। এ ছাড়া পয়েন্ট তালিকায় অবস্থানের ভিত্তিতে ৯৯ লাখ ইউরো ভাগ করে দেওয়া হবে ৩৬টি দলকে। নকআউট পর্বের প্রতিটি ধাপ পেরোলেই ১ কোটি ১০ লাখ ইউরো বোনাস পাওয়া যাবে। উয়েফার প্রতিযোগিতায় দলগুলোর ইতিহাস ও সম্প্রচারস্বত্বের ওপর ভিত্তি করেও ৮৫.৩ কোটি ইউরোর আরেকটি বোনাস রয়েছে দলগুলোর জন্য।
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন