সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ 

প্রকাশিত - ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪   ০৯:৪৫ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। গতকাল রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সিনিয়র সচিবের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, সকল সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৪ আগস্ট স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব বিবরণী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের স্মারকমূলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশে অবস্থিত সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ‘সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত ফরম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে দাখিল করার জন্য প্রধান বিচারপতি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের (স্বামী/স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) দেশে ও বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী আগামী ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংযুক্ত ফরম অনুযায়ী রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তরে দাখিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হলো।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। এখন কী পদ্ধতিতে কিভাবে জমা দেবে সে বিষয়ে আমরা ফরম্যাট রেডি করে দেবো।
পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীর নিজ সম্পদ বিবরণী নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার কথা। তবে চাকরির সেই আচরণবিধি আদতে মানছেন না তেমন কেউ। সম্পদের হিসাব দিতে সরকারি চাকরিজীবীর তেমন হেলদোল নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থারও হিসাব নেওয়ার ব্যাপারে নেই গরজ। দু’পক্ষের অনীহায় হিসাব দেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই ‘কাগুজে নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি তাদের অধীন কর্মকর্তাদের দায়সারা হিসাব নেয় বটে, কিন্তু সেগুলো খতিয়ে দেখা হয় না। কারও অস্বাভাবিক সম্পদ বেড়ে গেলেও ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। তবে বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে কাজ শুরু হলো।
সদ্য সাবেক সরকারের মন্ত্রী এমপি, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ও এনবিআর থেকে বদলি হওয়া কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকে সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাবের বিষয়টি ফের সামনে এসেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে দুর্নীতি বেড়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। বার্লিনভিত্তিক এ সংস্থাটি গত বছর দুর্নীতির যে ধারণা সূচক প্রকাশ করে, সেখানে আগের বছরের চেয়ে দুই ধাপ নিচে নামে বাংলাদেশ। সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন দশম।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, নিয়ম অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পর ডিসেম্বরে সরকারি কর্মচারী তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেবেন। আগে তা প্রতিবছর দেওয়ার নিয়ম ছিল। এখন পাঁচ বছরেও অনেকে তা দিতে চান না। তিনি বলেন, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত জনপ্রশাসন গড়ে তোলার স্বার্থে এ আচরণবিধি কঠোর ও কঠিনভাবে সরকারের প্রয়োগ করা উচিত। ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী অন্য মন্ত্রণালয় নিশ্চুপ থাকলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেহেতু আচরণবিধি জারি করেছে, তাই তাদের মুখ্য ভূমিকা নেয়া উচিত। ফিরোজ মিয়া বলেন, আচরণবিধি না মানলে তা অসদাচরণ। তাই সম্পদের হিসাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা উচিত। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ভীত হবেন এবং দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ না হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে।


 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে অসত্য তথ্য পরিবেশনের তীব্র প্রতিবাদ
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা