শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১
Proval Logo
প্রধানমন্ত্রীর ভারত-চীন সফর

আঞ্চলিক সমৃদ্ধির সোপান গড়বে 

প্রকাশিত - ০৯ জুন, ২০২৪   ০১:১৬ এএম
webnews24

বিশেষ প্রতিনিধি : নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটর জয় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেবে।নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নিয়েছেন। ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেয়ার সূচনা ঘটাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে বিজয়ের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। 

কূটনৈতিক মহলের মতে মোদি সরকার ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীনপ্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যে, গভীর উচ্চতার সম্পর্ক ছিল। বহুক্ষেত্রে তা ইতিহাস হয়ে আছে। যদিও ক্ষেত্র বিশেষে জাতীয় স্বার্থে নেয়া বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত ইন্দিরা গান্ধীকে আশাহত করেছিল বলেই কূটনৈতিক মহলের মূল্যায়ন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক তারই ধারাবাহিকতা বলেই অনেকে মনে করেন। ৪৭ সাল থেকে বিদ্যমান স্থল সীমান্ত বিরোধ ও সমুদ্র সীমা নির্ধারণের সুকঠিন কাজ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ঘটনা গোটা দুনিয়ার দৃষ্টান্তস্থাপনকারী। ভারত কর্তৃক তার ১০ হাজার একর ভূমি বাংলাশেকে শর্তহীনভাবে ছেড়ে দেয়া এবং ভারতের পার্লামেন্টে দেশটির সব দলের সর্বসম্মতভাবে অনুমোদনের নজিরবিহীন। দু’দেশের জনগণ ও নেতৃত্বের সম্পর্কের গভীরতা এতেই পরিমাপ করা যায় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। এই মহলের মতে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলেও এ সম্পর্কের ব্যত্যয় হতো না। তবে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের গভীরতার প্রেক্ষাপটে সামনের দিনগুলোতে দু’দেশই এর সুফল ভোগ করবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে মোদি তাঁর নেতৃত্বধীন জোটের বিজয়ে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকেই প্রথম অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হলো। নরেন্দ্র মোদি, তাঁর সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শেখ হাসিনার ভারত সফরই হবে কোন বিদেশি নেত্রীর প্রথম সে দেশ সফর। নরেন্দ্র মোদিও দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বাংলাদেশেই আসবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়।

তিস্তাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানি বণ্টন, তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা, বিশাল বাণিজ্য বৈষম কমিয়ে আনাসহ দ্বিপক্ষীয় সমস্যাসমূহ ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহে আলোচনা, মতবিনিময় করতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়। এই সূত্রে আরো জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন হবে না। তবে দুই নেতার বৈঠক তিস্তার হিস্যা চূড়ান্তভাবে নির্ধাররিত হবে। বাংলাদেশের আশক্সক্ষা ও দাবির কাছাকাছি হারে পানি বণ্টন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার উপর দু’পক্ষই জোর দিচ্ছে। চীনও এ মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করতে আগ্রহী। ভারত ও চীন এ প্রকল্পে বাংলাদেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেয়ার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে মমতা ব্যানার্জি এক্ষেত্রে বাধা হয়েই থাকছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব নেয়ার পর জুনের প্রথম ভাগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ভুটান, নেপাল, চীন সফরেও যাবেন। পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগ্রহও রয়েছে ভারতীয় নেতার। চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত মেয়াদে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চীনের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বাংলাদেশের নেত্রীর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে জানা যায়। চীন-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর গুরুত্ব পাবে বলেও জানা যায়। বাংলাদেশের অবকাঠামো, অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীন বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির প্রবল বিরোধী। ভাটির রাজ্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে তারা বাংলাদেশকে পানি দেয়ার বিপক্ষে। কিন্তু ভাটির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ীই ভারতকে বাংলাদেমকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। উজান থেকে অন্যান্য রাজ্যে পানি সরিয়ে নেয়ার ফলেই তিস্তার প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার ঘটনা মমতা ব্যানার্জি নির্বিকার। পশ্চিমবঙ্গে মমতার তৃণমূল নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেছে। এতে মমতার অনেক বেশি শক্তি অর্জন করল। মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া নরেন্দ্র মোদির পক্ষে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করা সম্ভব হবে কি নাÑ সে প্রশ্ন রয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কমপক্ষে সাত বছর লাগবে। এই সময়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হতে পারে, তা-ও মমতার সম্মতি সাপেক্ষে। এ ব্যবস্থায় তিস্তা চুক্তি নরেন্দ্র মোদির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকছে। তবে অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে অন্তত ৭টির পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান স্বল্পসময়েই করার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে তাঁর মেয়াদকালেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মেয়াদকালে তিনি সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। এখন তাঁর আরেক মেয়াদ শুরু হয়েছে।
প্রভাত/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল