প্রভাত রিপার্ট : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। তার আগে ভোটার বাড়ানোর জন্য বার্ষিক সাধারন সভার (এজিএম) আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই সভার আয়োজন করা হয়। আর্থিক অনটনে থাকা বাফুফে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজন করেছে। এই সভার উদ্দেশ্যই ছিল নারী ফুটবল লিগে শীর্ষ চার দলের কাউন্সিলরকে আসন্ন নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ করে দেয়া। এজিএমে সেটারই অনুমোদন হয়েছে। ঘণ্টা দু’য়েক চলা বার্ষিক সভা শেষে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজনকে নিয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ’নিয়মিতভাবে আয়োজন করে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রুটিন কিছু বিষয়ের সাথে শুধু নারী লিগের ৪ টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ অনুমোদিত হয়েছে।’ শনিবারের সভায় সিদ্ধান্ত হলেও এই সভার কার্যবিবরণী পরবর্তী সাধারণ সভায় অনুমোদন হওয়ার পর কি কাউন্সিলরশিপ সক্রিয় হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি।

এরপর আরেক সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ’এবারের এজিএমে সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখন থেকেই কার্যকর। পরবর্তী সভায় কার্যবিবরণী অনুমোদন আনুষ্ঠানিকতা।’ বাফুফের কর্তারাই বছর দেড়-দুই আগে ফিফার বরাত দিয়ে বলেছিলেন নির্বাহী কমিটির আকার ও কাউন্সিলর কমাতে। বাফুফে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটিও করেছিল। সেই বাফুফে দুই বছর পর ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে কাউন্সিলর বৃদ্ধি করল। ফিফার নির্দেশনা এক রকম, বাফুফের কর্মকান্ড আরেক রকম। বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন এই প্রসঙ্গে বলেন, ’ফিফা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছিল, আমরা বলেছি কমালে ফিফাকেই কমাতে হবে। সাধারণ সভা ছাড়া কমানো-বাড়ানো সম্ভব না। সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা এখন ফিফাকে জানাব।’ অবশ্য কাউন্সিলরশিপ পাওয়া চারটি দলের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফুটবল দল ছাড়া বাকি তিন দলই বাফুফে কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট।

চ্যাম্পিয়ন হওয়া নাসরিন স্পোর্টস একাডেমীর সাথে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সম্পৃক্ততার কথা জোরেসোরে শোনা যায় ফুটবলাঙ্গনে। আতাউর রহমান ভুইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাব বাফুফে সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভুইয়া মানিকেরই। বাফুফে কর্তাদের ভোট বৃদ্ধি করতেই কি তিন মাস আগে এই সিদ্ধান্ত? সভাপতি সালাউদ্দিন ও সালাম মুর্শেদী এর সদুত্তর দিতে পারেননি। সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন, 'আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ফুটবলেও সর্বশেষ লিগের শীর্ষ দলগুলো কাউন্সিলরশীপ পায়। সর্বশেষ লিগে যারা অবস্থান করে তারাই ভোটাধিকার পেয়ে থাকে। নারী লিগেও সেই নিয়ম হয়েছে। আগামীতেও যারা শীর্ষে থাকবে তারাই পাবে।’ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো চার বছরে ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো খরচ করে। এরপর বাফুফের নির্বাচনে একটি ভোটাধিকার পায়। সেখানে নারী দল একটি লিগে মাত্র ৬-৭ ম্যাচ খেলেই ভোটাধিকার পেল। এ নিয়ে বাফুফে সভায় চরম মত বিরোধ ছিল।

নানা উপেক্ষার পর এজিএমে শীর্ষ ৪ দলকে কাউন্সিলরশীপ প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়। আজ সাধারণ সভায় উপস্থিত হওয়া অনেক প্রতিনিধি সহসাই নারী লিগের ক্লাবগুলোর পক্ষে ছিলেন না। আলোচ্যসূচিতে কাউন্সিলরশিপ প্রসঙ্গে আসলে ভোটাভুটি হয়। এতে আপত্তি তুলে অনেকে মতামত রাখতে চাইলেও মন্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়নি। নতুন সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার কন্ঠরোধ করেছেন বলে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এই অভিযোগ তুলেছেন। তড়িঘড়ির ভোটাভুটিতে উপস্থিত অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন। কেউ সবুজ বোর্ডে হ্যা আবার কেউ লাল বোর্ডে নাও তুলেছিলেন। দুই তিন জন জোরে পাশ পাশ বলায় নির্বাহী কমিটির মঞ্চ থেকে হ্যাঁ জয়যুক্ত ধরে কাউন্সিলরশিপ অনুমোদন আসে। প্রায় একবছর আগে বাফুফের পদত্যাগ করা নির্বাহী সদস্য ও নীলফামারী জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আরিফ হোসেন মুন সভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, ’এজিএমে এরকমটা হবে এটা একরকম প্রত্যাশিতই ছিল। সব কিছুই তাদের অনুকূলে ও সাজানো। কথা বলেও কোনো প্রতিকার বা পরিবর্ত হয় না। তাই অনেকেই কথা বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে। এজিএম এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তাদের যদি বোধহয় তাহলেই কেবল ফুটবল উন্নয়ন সম্ভব না হলে হয়।’

শরীয়তপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হিসেবে এজিএমে উপস্থিত মোজাম্মেল হক চঞ্চল নারী ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ প্রদানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে তাতে অবশ্য খুব বেশি কাজ হয়নি। তিনি কিছুটা হতাশা নিয়ে বলেন, ’ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও অনেকেই না তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা পাশ করিয়েছে। তবে এটা অপ্রত্যাশিত নয় প্রত্যাশিত ছিলই। পরিকল্পনা মতোই সবকিছু করেছে বাফুফের নির্বাহি কমিটি।’
প্রভাত/আসো