বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

শেরপুরের ঐতিহাসিক কাটাখালি যুদ্ধ দিবস পালন

প্রকাশিত - ০৬ জুলাই, ২০২৪   ০৮:০২ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

প্রভাত সংবাদদাতা, শেরপুর  : শেরপুরের ঐতিহাসিক কাটাখালী যুদ্ধ দিবস পালন করা হয়েছে শনিবার। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে কাটাখালি শহীদ নাজমুল পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ নাজমুল আহসানের স্মৃতিস্তম্ভে পূষ্পার্ঘ অর্পন ও আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম এবং প্রথান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর -৩ আসনের এমপি এডিএম শহিদুল ইসলাম।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাটাখালী ব্রীজ ভাঙতে আসা মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর যুদ্ধ হয়। সেদিনের সেই সম্মুখযুদ্ধে একই পরিবারের তিন বির মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজমুল আহসান, মোফাজ্জল হোসেন ও আলী হোসেনসহ ১২ জন শহীদ হন। কমান্ডার নাজমুল আহসান ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের বিদ্যাপিঠ ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হল নির্মাণ করা হয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বীর সন্তানের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে নালিতাবাড়ীর মানুষও পিছিয়ে থাকেনি।নালিতাবাড়ীতে তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি কলেজ। এছাড়াও শেরপুর সড়ক ও জনপথ এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে কাটাখালী ব্রীজ চত্বরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ নাজমুল আহসান চত্বর ও পার্ক। 
সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুল আহসানকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে অপারেশন কাটাখালি ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে।
উল্লেখ্য , ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা ডিনামাইট ফিট করে ঝিনাইগাতী-শেরপুর সড়কের কাটাখালি ব্রিজ উড়িয়ে দেন। সেই অপারেশনের নেতৃত্বে প্রদান করেন, কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল আহসান। সফল অপারেশন শেষ করতে ভোর হয়ে যায়। তাই ফিরে যাওয়ার পথে মুক্তিযুদ্ধাগন পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে আশ্রয় নেন । দিনের আলোতে কোথাও বের হওয়া নিরাপদ হবে না ভেবে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা সেখানেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু ওই গ্রামেরই এক দালাল, জালাল মিস্ত্রী পাক বাহিনীর আঞ্চলিক হেড কোয়ার্টার আহাম্মদনগর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর পৌঁছে দেন। সংবাদ পেয়ে পাক আর্মি , হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার,  ও আল-বদরদের এক বিশাল সম্মিলিত বাহিনি ৬ জুলাই সকালে রাঙ্গামাটি গ্রামটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তারা গুলিবর্ষণ শুরু করলে কমান্ডার নাজমুল আহসানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়েন। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। 
হানাদার বাহিনী গ্রামটিকে তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলায় মুক্তিযোদ্ধারা বাধ্য হয়ে রাঙ্গামাটি বিলের পানিতে নেমে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। বিলের পানিতে ভেসে  কভারিং ফায়ার করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। মুক্তিযোদ্ধাদের রাঙ্গামাটি বিল সাঁতরিয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে কমান্ডার নাজমুল নিজেই সামনে থেকে ফায়ার করছিলেন। হঠাৎ পার সেনাদের ছোড়া একঝাঁক গুলি এসে কমান্ডার নাজমুল আহসান ঝাঁঝড়া করে দেয়। সেখানেই শহীদ হন কমান্ডার নাজমুল। তার লাশ আনতে গিয়ে হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন তারই চাচাতো ভাই মোফাজ্জল হোসেন ও ভাতিজা আলী হোসেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার অপরাধে সেদিন পাক বাহিনী রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের ৬০ থেকে ৭০ জনকে ধরে আনে। তাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন শহীদ হন।

প্রভাত/টুর

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন