সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

দাবি আদায়ে ন্যূনতম ছাড় দেব না :  শিক্ষক নেতৃবৃন্দ 

প্রকাশিত - ০৭ জুলাই, ২০২৪   ০৯:৫৬ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

প্রভাত রিপোর্ট : ক্লাস বর্জনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের গতকাল রবিবার ৫ম দিন অতিবাহিত হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে এই আন্দোলন চরছে। রবিবার দুপুরে ঢাবির কলা ভবনের সামনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেছেন, আমরা আমাদের দাবি আদায়ে ন্যূনতম ছাড় দেব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবেই। সবগুলো দাবি মানা হলেই আমরা ক্লাসে ফেরত যাব।
আখতারুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আমরা করুনা চাইছি না, আমরাই জাতি গঠন করি। আমরা আমাদের অধিকার চাইছি। আমাদের এসময়ে এসে নতুন পে-স্কেল ও সুপার গ্রেড নিয়ে আন্দোলন করার কথা, কিন্তু আমাদের সেই আগের পে-স্কেল নিয়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে একজন শিক্ষক মাত্র ২৩ হাজার টাকা বেসিকে চাকরি শুরু করতেন। নয় বছর পরেও একই বেতনে চাকরিতে ঢুকছে। এ যুগে এসে কোন চাকরিতে এমন বেতন আছে? শুধু তারা এই পেশাকে ভালোবাসেন এবং জাতিকে গঠন করার জন্য শিক্ষকতা করেন। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই যে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে। তারা সেখানে কর্ণপাতই করেন না। অথচ অবৈধ অটোরিকশা বন্ধ করার পরে এর চালকরা একদিন আন্দোলন করেছে বলে দেশ নাকি অচল হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কি ক্লাসে ফেরার প্রয়োজন নেই? 
আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা নীরব আন্দোলন করছি দেখে তারা ভাবছেন আমরা কিছুই পারি না। তারা কি রাস্তা অবরোধ পছন্দ করেন? ভাঙচুর পছন্দ করেন? নাহলে তারা আমাদের একটা বার ফোন দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না? অনেকে মনে করছেন, আমরা নাকি বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু না আমরা আগের সিস্টেমেই আছি, নতুন সিস্টেম মানতে চাইছি না। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে ন্যূনতম ছাড় দেব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবেই। সবগুলো দাবি মানা হলে পরে আমরা ক্লাসে ফেরত যাব। 
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, এ আন্দোলন থেকে শিক্ষক সমাজ পিছু হটবে না। এ আন্দোলন চলমান থাকবে, আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এ আন্দোলন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। এ আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়। এটা শুধু প্রত্যয়ের বিরুদ্ধে। যারা এ স্কিম চালু করে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অচল করতে চাচ্ছে, এ আন্দোলন তাদের বিরুদ্ধে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তিনদফা দাবিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে না নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে আমাদের সুপারগ্রেড দেয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য শক্তিবলে আমরা পাইনি। আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আমাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা থাকলেও তা আমরা পাইনি। এরপর আবার আমাদের উপর প্রত্যয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি তিন শতাধিক শিক্ষক। আমাদের এ আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। তাই আমরা বলতে চাই, আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন থামাব না।
চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দে বলেন, এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পাঁয়তারা চলছে? শিক্ষক সমাজ সেটা কখনো মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে বলতে চাই, আপনি যাদের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা এটা করবে না। আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে। আপনিই তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষাই জাতির মেরুদ- গড়তে চাইছেন শিক্ষকদের মাজা ভেঙে দিয়ে?  তিনি বলেন, বর্তমান স্কিমের ফলে একজন শিক্ষকের বেতন দিয়ে কামরাঙ্গীরচরেও পরিবার নিয়ে থাকতে পারবে না। একজন শিক্ষক চাকরিতে যোগ দিয়ে বিয়েই করতে পারবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করুন। এটাই আমাদের আবদার, এটাই আমাদের অধিকার, এটাই আমাদের অনুরোধ। 
অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম বলেন, আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৩ শতাধিক শিক্ষক একাত্মতা প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন। এটা আমাদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নৈতিকদিক শিক্ষা দেন তাই তারাও অনৈতিক পথে আয় করেন না। ফলে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর জীবনের জন্য তহবিল প্রয়োজন। এই আন্দোলন আমাদের ন্যায্য আন্দোলন। এখানে ভিন্ন বার্তা খোঁজার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এই ৩টি দাবি মানার আগ পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
 এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকাল থেকেই কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরতি নেন। ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাবি শিক্ষকরা। ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জাহিদ, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. এম ওহিদুজ্জামান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ শিক্ষক নেতারা বক্তব্য দেন। 
প্রসঙ্গত, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে গত ২০ মে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তার ধারাবাহিকতায় ২৬ মে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এরপর ২৮ মে দুই ঘণ্টা এবং ২৫-২৭ জুন তিন দিন সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে গতকাল ৩০ জুন পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করা হয় এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।


শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ জন জীবনে চরম দুর্ভোগ

কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছে। রাত ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যারেটরি মোড়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছে বলে পুলিশের সূত্র জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাতে কেউ নাশকতাসহ বিশৃঙ্খলা সুষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে আইন- শিৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তক অবস্থায় রয়েছে।  শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করার কারনে জন জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। কর্মজীবী মানুষসহ সাধারণ মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ে থাকা। রাজধানীর প্রবেশ মুখসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অবরোধ করে রাখায় রাজধানীতে যানবাহন প্রবেশ বাধাগ্রস্থ হয়। ময়মনসিংহে ট্রেন লাইনে অবস্থান করায় বিঘিœত হয় ট্রেন চলাচল।
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার শাহবাগ মোড় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। দুপুর ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে একটি মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে এসে সবদিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বসে পড়েন। এতে সবদিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা  গান গেয়ে এবং স্লোগান দিয়ে কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। 
কয়েক হাজার আন্দোলনকারী মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বেধে এবং কেউ কেউ মাথায় 'কোটা মুক্ত দেশ চাই' ফিতাও বেঁধে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। । সেখানে লেখা আছে 'বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন' ও 'কোটাসহ সকল বৈষম্য নিপাত যাক' গ্রাফিতিলিখে রাখে।
আন্দোলনে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা আজ শাহবাগে জড়ো হয়েছি। পরবর্তী কর্মসূচি যা দেওয়া হবে, আমরা সে অনুযায়ী পালন করব।
এর আগে শনিবার কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সারাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।
সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। পরে গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখার নির্দেশ দেন এবং এই রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করার পরামর্শ দেন।
হাইকোর্ট কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করার পর থেকেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ ‘বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। এরই অংশ হিসেবে আজ বিকেল পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। ফলে শাহবাগ ও তার আশপাশের এলাকার সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে সড়কে আটকে থাকা যানবাহনের সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছে।   
শুরুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে আসেন। এরপর একে একে শাহবাগ মোড়ের চারটি রাস্তা বন্ধ করে দেন। ফলে শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাবের দিকের রাস্তা, শাহবাগ থেকে বাংলামটরের দিকের রাস্তা, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাবের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখনও শাহবাগ থেকে পরিবাগ হয়ে সায়েন্সল্যাবের সড়কে তীব্র যানজট লেগে আছে। তবে পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে শাহবাগের দিকে আসা যানবাহগুলো ঘুরিয়ে কাকরাইল মসজিদের রাস্তাসহ অন্যান্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। অন্যদিকে বাংলামটরের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো ইন্টারকন্টিনেন্টালের আগের রাস্তা দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন তখনকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালে সেই পরিপত্রের ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে’র অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে সে ব্যাপারে আপিল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

ঢাকা ঢুকতে পারেনি কোনো গাড়ি


সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করার দাবিতে রাজধানীর চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে যানবাহন ওঠা-নামার সুযোগ। ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেনি কোনো গাড়ি। তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের। রবিবার বিকেল তিনটা থেকেই এই সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা ।

ঢাকায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ভোগান্তি এবং দীর্ঘ যানজট। অবরোধের কারণে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, রামপুরা, হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা স্টাফ-কোয়ার্টার, সিলেট, চিটাগাং রোড, শনির আখড়া, সাইনবোর্ডে যাওয়ার এবং আসার সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইওভারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শত শত যানবাহনকে। বিক্ষুব্ধ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিবহনের গাড়িও গন্তব্যে যেতে পারেনি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি চলবে। সারা দেশের ছাত্রসমাজ এই ইস্যুতে একত্রিত হয়েছে। কোটার নামে বৈষম্য চলতে দেওয়া হবে না। তাই অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা প্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করতে হবে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। চাঁনখারপুল মোড়েই প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ময়মনসিংহে ট্রেন অবরোধ

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহ নগরীতে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যাত্রী সাধারণের মাঝে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। রবিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এই ট্রেন অবরোধের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং এলাকায় জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আটকে রাখা হয়। এই আন্দোলনে নগরীর আনন্দমোহন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী বাংলা ব্লকড কর্মসূচির আওতায় এই ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে। অবিলম্বে কোটা প্রথা বাতিল করা না হলে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে ছাত্রসমাজ।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা পোস্টকে করে জানান, আন্দোলনে মুখে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুক্ষণ আটকা পড়েছিল। তবে এখন ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা দুই দফায় ট্রেন অবরোধ করেছিলেন।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সংবাদ সম্মেলন