প্রভাত রিপোর্ট: গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই। থামার কোনও নামগন্ধ নেই। প্রতিদিনই ঝরছে শত শত প্রাণ। বাদ যাচ্ছে না নারী-শিশুরাও। ওই দিকে বিশ্বমোড়লরা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তাদের ‘ঘুম ভাঙাতে’ বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ফুঁসে উঠেছে জনতা। দিচ্ছেন ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক।
যশোর: সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা ভৈরব শহীদ চত্বরে সমাবেশ করে ‘যশোরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’। ‘লাখো শহীদের রক্তের ঋণ, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’ স্লোগানে স্লোগানে যশোর শহরের রাজপথ প্রকম্পিত করে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জায়নবাদী ইসরায়েল মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি শিশু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনকে একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।’ সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের সব ধরনের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়।
নরসিংদী: বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নরসিংদীর ছাত্র-জনতা। সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা অবধি শহরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন।
সকাল থেকেই শহরের শিক্ষাচত্বর মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি নরসিংদী প্রেসক্লাব এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানার মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে বেলা সোয়া ১১টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলি পণ্য বর্জন, হামলার বিচার দাবিসহ অন্যান্য স্লোগানে মুখরিত হয় বিক্ষোভস্থল। গাজাকে রক্ষার পাশাপাশি দাবি ওঠে ইসরাইলের বিচারের। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে যায় বিক্ষোভকারীরা।
ময়মনসিংহ: গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে ময়মনসিংহের সর্বস্তরের জনগণের উদ্যোগে নগরীর টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলি বর্বরতার বিপক্ষে লেখা নানা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে।’ এ সময় বাংলাদেশ সরকারকে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
রাজবাড়ী: সোমবার সকাল ১০টার দিকে গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গোয়ালন্দ সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে শত শত ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি মহাসড়ক হয়ে উপজেলা কোর্টচত্বর মাঠে গিয়ে শেষ হয়। পরে ফিলিস্তিনের নিহত ও আহতের স্মরণে দোয়া মোনাজাত করা হয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা জানান, ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের মাধ্যমে মুসলমানদের ওপর জুলুম অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ শুরু করা উচিত। তা ছাড়া ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় মুসলমানদের ওপর নারকীয় হত্যা বন্ধ করতে বিশ্ব মুসলিমদের একতাবদ্ধ হওয়ার বিকল্প কিছু নেই। জীবনবাজি রেখে মুসলমানদের রক্ষায় যুদ্ধে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভকারীরা আরও জানান, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নিরীহ গাজাবাসীর উপর সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক বর্বরোচিত হামলা, গণহত্যা এবং ভারতে মুসলিমদের শ্লীলতাহানি ও হত্যার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের মতো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের রাজপথে বিক্ষোভে নেমে এসেছে। এরপর থেকে যদি বিশ্বের কোনও মুসলমানের ওপর হামলা করা হয় তাহলে বিশ্বের মুসলিমও বসে থাকবে না। মহান আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে তাই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
কুড়িগ্রাম: সারা দেশের মতো আজ কুড়িগ্রাম জেলা শহরের শাপলাচত্বরেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। ইসরায়েলি বর্বরতায় ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে হাজারো মুসলিম জনতা ও শিক্ষার্থী প্রতিবাদী স্লোগান নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়। ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান’ ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নির্বিচারে মানুষ হত্যার জন্য ইসরাইলের প্রতি ধিক্কার জানানো হয়। একই সঙ্গে নজিরবিহীন এই হত্যাযজ্ঞ ও আগ্রাসন বন্ধ করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়। একই দাবিতে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে তারা জেলা শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
খাগড়াছড়ি: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির জেলার নয় উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন ইসলামি দল ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ। জেলার সদর উপজেলা, মাটিরাংগা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, দিঘিনালা, পানছড়ি, গুইমারা, রামগড়সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তারা ইসরায়েলি হামলা বন্ধ, ফিলিস্তিন ভূমি দখলের আগ্রাসন বন্ধ করার দাবির পাশাপাশি ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের দাবি জানান।