প্রভাত ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর বলেছিলেন, তিনি এক দিনের জন্য স্বৈরশাসক হতে চান। যদিও পরে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি কেবল মজার ছলে এটা বলেছেন। এখন তিনি বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি হয়তো ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। দুই মেয়াদের পর একজন প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হবে। হয়তো ট্রাম্প করবেন অথবা করবেন না। তবে তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে এবং সমালোচকদের কাছ থেকে উৎসাহ পেতে ভালোবাসেন।
ট্রাম্প সংবিধানের বাইরে গিয়ে তৃতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার সম্ভাবনার কথা বলে সেদিন বাকি সব খবর থেকে সংবাদমাধ্যমের নজর নিজের দিকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। নিশ্চয়ই ট্রাম্পের নিজ শিবিরের অনেকে একে কৌতুক হিসেবে নিয়েছেন, রিপাবলিকান নেতারা হেসেছেন এবং সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের এ কথা এতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ায় হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা তাঁদের উপহাস করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প যে ধারণার কথা বলেছেন, তা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। প্রায় ২৫০ বছর আগে স্বাধীনতার পর এই সাংবিধানিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অতীতে কখনো ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও আইনের শাসনের প্রতি একজন প্রেসিডেন্টের যে প্রতিশ্রুতি, তা এতটা প্রশ্নের মুখে পড়েনি। ট্রাম্পের সমালোচকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র অন্ধকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সংবিধান অমান্য করার চেষ্টা অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও একবার তিনি সংবিধান অমান্য করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর তিনি ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে ট্রাম্প নতুন নির্বাচন ছাড়াই হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার জন্য সংবিধান বাতিলের দাবিও করেছিলেন।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের পর ১১ সপ্তাহে তিনি যত নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, আধুনিককালে তাঁর পূর্বসূরিদের কেউ এমনটা করেননি।
নিউইয়র্কের প্রতিনিধি ডেমোক্র্যাট নেতা ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান এক সাক্ষাৎকার এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি এরই মধ্যে যা শুরু করেছেন, এটা তারই চূড়ান্ত নাটকীয় রূপ। গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল ও দুর্বল করার এটি একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা, যেন তিনি আরও বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠতে পারেন। গত শুক্রবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে গোল্ডম্যান আরও বলেছিলেন, ‘অনেক মানুষ এটা নিয়ে কথাই বলছেন না। কারণ, নির্দিষ্ট ওই দিনে এটা সবচেয়ে জরুরি বিষয় ছিল না।’
গত বুধবার বেশ কয়েকটি দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করে বিশ্ব বাণিজ্যে তোলপাড় তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর সারা বিশ্বে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে।
এভাবে আসলে গণতন্ত্রের ওপর হামলা হচ্ছে বলে মনে করেন গোল্ডম্যান। এই ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, লোকজনকে বুঝতে হবে যে এটা এখন আর কাল্পনিক বা অমূলক নেই। আসলেই গণতন্ত্রের ওপর হামলা শুরু হয়েছে।